হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি: ওরা বেকার। তাই সরকারের দেয়া ন্যাশনাল সার্ভিসে কাজ করে জীবন-জীবিকা চালাতে হচ্ছে। কিন্তু সেই ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় প্রায় ২ হাজার ১ শত সুবিধাভোগদের সরকারি ভাতা থেকে দুই শত করে টাকা জোর পূর্বক কেঁটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিশেষ টোকেন ছাড়া ওইসব সুবিধা ভোগিদের ন্যায্য ভাতা দিচ্ছে না হাতীবান্ধা উপজেলার দায়িত্বরত যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল কবির। অবশ্য এতে ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতা ওই টাকায় শীতবস্ত্র কিনে দান করবেন এমন অজুহাতে বেশ বীরদর্পে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর ওই কাজে স্থানীয় আ‘লীগ নেতারা প্রকাশ্যে সেই দুই শত করে টাকা নিয়ে বিশেষ টোকেন দিয়ে বিল উত্তোলনের ছাড়পত্র দিচ্ছেন সুবিধা ভোগিদের। মঙ্গলবার দুপুরে এমনি দৃশ্য দেখা গেছে হাতীবান্ধা উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের কার্যালয়ের সামনে।
এদিকে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে নিজের চাকুরী হারানোর ভয়ে ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকুরীরত অনেকেই মুখে কুলপ আটলেও কেউ আবার রসিকতা করে এই প্রতিবেদক বলনে, “আমরা বেকার হলেও সরকারের দেয়া অস্থায়ী এই চাকুরীটি পেয়ে এখন হয়তো রাতারাতি বিত্তবান হয়ে গেছি! আর তাই আমাদের ঘাম ঝড়ানো টাকায় এখন শীতবস্ত্র কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে”! বিষয়টি কতটুকু নৈতিক বা অনৈতিক এনিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠলেও অনেকেই আবার উত্তোলনকৃত চার লক্ষাধিক টাকার সঠিক ব্যবহার নিয়েও শংকা প্রকাশ করেছেন।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের প্রবেশদ্বারে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছেন সিংঙ্গীমারী ইউনিয়ন আ‘লীগের সাংগঠনিক জহুরুল ইসলাম মিঠু ও একই ইউ,পি‘র ৪ নং ওয়ার্ড আ‘লীগের সা. সম্পাদক হযরত আলী। ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতাদ্বয় ন্যাশল সার্ভিসের ভাতা নিতে আসা যুবক-নারীদের কাছে প্রকাশ্যে দুই শত টাকা করে নিয়ে বিশেষ টোকেন দিচ্ছেন।
আর ওই টোকেন নিয়ে হাতীবান্ধা যুব উন্নয়ন অফিসের ভিতরে গিয়ে তা জমা দিয়ে বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করছেন অনেকেই। এসময় যাদের হাতে টোকেন নেই তাদের আবার ফিরিয়ে দিচ্ছে অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই অনেকেই নিরুপায় হয়ে দুই শত টাকা যোগার করে কার্যলয়ের প্রবেশদ্বারে চেয়ার টেবিলে বসে থাকা আ‘লীগ নেতার কাজ থেকে বিশেষ টোকেন সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সুত্রে মতে হাতীবান্ধার মূল হোতা যুবলীগ নেতা মিরুর কারনে টাকা উত্তোলন করছেন বলে জানান। উপজেলার কিছু সাংবাদিকে ম্যানেচ করে এ কাজ করছেন বলে অনেকে বলা বলি করছেন ।
তবে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (দায়িত্বরত) এনামুল কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি তো ভাল কাজ। কিন্তু বেকারদের কর্মের বিনিময়ে সরকারের দেয়া ভাতার টাকা কেটে দান করা কতুটুকু যৌক্তিক- এমন প্রশ্নের উত্তরের তিনি বলেন আমাকে উপজেলা পরিষদ থেকে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বললেন, “বিষয়টি আমি জানি না। আর সরকারের নিজস্ব তহবিলের দেয়া ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকুরীতদের টাকা কেটে নেয়া যৌক্তিক নয়”- বলে দাবি ইউএনও‘র। আর তাই বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকারের ন্যাশনাল সর্ভিসের অধিন হাতীবান্ধা প্রায় ২ হাজার ১ শত যবক-যবুতী চাকুরী করে আসছে। এদের প্রত্যেকেই সরকারি ভাবে মাসিক ৬ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। এরমধ্যে চাকুরীতরদেন সঞ্চয়ী হিসাবে ২ হাজার টাকা সরকারি নিয়মে রেখে বাকি চার হাজার টাকা হিসেবে তিন মাস বা ছয় মাস পরপর পরিশোধ করা হচ্ছে। কিন্তু এবার সেইসব চাকুরীরতদের সরকারি ভাতা থেকে দুই শত টাকা করে কেটে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ব্যানারে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে এলাকাবাসীদের মাঝে।