আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

কত মিথ্যেকে সত্যি ভাবি, শুধু ভুল করে

বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৫, সকাল ০৯:২৯

প্রভাষ আমিন

গত সপ্তাহে এই কলামে লিখেছিলাম, সত্য বলে আসলে কিছু নাই। সবই আপেক্ষিক। নইলে একইদিনে কীভাবে গণতন্ত্র ‌‌'রক্ষা' এবং গণতন্ত্র 'হত্যা' দিবস পালন করা সম্ভব। দুটি তো একই দিনে হতে পারে না। তাই সত্য আসলে আপেক্ষিক, সত্য আসলে দৃষ্টিভঙ্গি। চূড়ান্ত সত্যি বলে কিছু নেই।

বাংলাদেশে যখন দিন, আমেরিকায় তখন রাত। বাংলাদেশে যারা সংখ্যালঘু, ভারতে তারা সংখ্যাগুরু। তালেবানদের কাছে যা ধর্মযুদ্ধ, বাকি বিশ্বের কাছে তা সন্ত্রাস। প্যালেস্টাইনে যা আগ্রাসন, ইসরায়েলের কাছে তা আবাসন। বিএনপির কাছে যা আন্দোলন, আওয়ামী লীগের কাছে তা সহিংসতা। গত ৩ তারিখ রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের কার্যালয়ে থাকছেন। বিএনপি দাবি করছে, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকারি দল বলছে, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। তিনি নাটক করছেন। এখানেও আপনি চাইলে আপেক্ষিকতাবাদের প্রয়োগ করতে পারেন। তবে যেভাবে গুলশান অফিস পুলিশ ঘিরে রেখেছে, যেভাবে ইট-বালুর ট্রাক পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে, যেভাবে গুলশান কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেভাবে খালেদার জিয়ার বেরোনোর চেষ্টার সময় পেপার স্প্রে করা হয়েছে; তাতে আমি বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধই করে রাখা হয়েছে।

সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে শুধু তার বাসায় যেতে দেওয়া হবে, অন্য কোথাও নয়।

গত ৯ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তির বরাত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তাতে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু তাই বলে খালেদা জিয়াকে অমিত শাহর ফোন আর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি তো তথ্য। এখানে তো আপেক্ষিকতাবাদের সুযোগ নেই। এটা তো তথ্য। এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সুযোগ কই? গত ৯ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তির বরাত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তাতে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরদিন সেই বিবৃতিতে নাম আছে, এমন দুজন পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানান, তারা এমন কোনও বিবৃতি দেননি। বরং তাদের নামে এমন বিবৃতি প্রচার গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেন।

একইদিনে বেগম খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানের বরাত দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে বেগম জিয়ার খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু পরে একাধিক গণমাধ্যম বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি।

অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে মারুফ কামাল খান বলেন 'বিজেপি প্রধান সরাসরি টেলিফোন আলাপে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কুশলাদি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।' গণমাধ্যমের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে মারুফ কামাল খান বলেন 'শ্রীযুক্ত অমিত শাহ বা তাঁর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে এর সত্যতা নিরূপন না করে অজ্ঞাতনামা কূটনৈতিক বা অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা খুবই অনভিপ্রেত।'

এই ফোনালাপ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির পর গত ৯ জানুয়ারি বেগম জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তিতে বেগম জিয়ার সঙ্গে অমিত শাহর টেলিফোন আলাপ হয়নি, এমন সংবাদকে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করা হয়। অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে মারুফ কামাল খান বলেন 'বিজেপি প্রধান সরাসরি টেলিফোন আলাপে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কুশলাদি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।' গণমাধ্যমের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে মারুফ কামাল খান বলেন 'শ্রীযুক্ত অমিত শাহ বা তার অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে এর সত্যতা নিরূপন না করে অজ্ঞাতনামা কূটনৈতিক বা অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা খুবই অনভিপ্রেত।'

মারুফ কামাল খানের দৃঢ় অবস্থানের পর আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে যাই। তাহলে কী এতগুলো মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে? মারুফ কামালের পরামর্শে ১০ জানুয়ারি দুটি টিভির পক্ষ থেকে সরাসরি অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলা হয়। অমিত শাহ নিজেই বলেছেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়নি। মারুফ কামালের বিবৃতি পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, অমিত শাহর কথা শুনে টাসকি খেয়ে গেলাম। আমি তাহলে কাকে বিশ্বাস করবো? মারুফ কামাল তার বিবৃতিতে অারও বলেছেন, 'প্রতিবেশী দুটি দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের প্রধানের মধ্যে টেলিফোন একটি প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক ঘটনা।' খুব ঠিক কথা। কিন্তু সেই 'প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক' ঘটনাটি তো ঘটতে হবে নাকি? অমিত শাহ নিজে অস্বীকার করার পরও মারুফ কামাল খান তার বক্তব্যে অনড়। অপর এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, তার দেওয়া তথ্য শতভাগ সঠিক। অমিত শাহর সঙ্গে খালেদা জিয়ার ফোনালাপ তার উপস্থিতিতেই হয়েছে। মারুফ কামাল আরও বলেন, ‘বিজেপিপ্রধান প্রকৃতপক্ষে তাদের (গণমাধ্যম) কোনও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি-না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছি না। অমিত শাহর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠজনদের কাছে আমাদের অনুসন্ধানে এটুকু বেরিয়ে এসেছে যে, বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও দলের সদস্য সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত বিজেপিপ্রধানের পক্ষে ঢাকার কোনও সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার প্রদানের কোনও সুযোগ ছিল না।’

বিভ্রান্তিরও একটা সীমা আছে। আর কি করলে মারুফ কামাল খান বিশ্বাস করবেন, ফোনের অপর প্রান্তে অমিত শাহ ছিলেন না। বাংলাদেশের গণমাধ্যম যদি অমিত শাহকে পেতে পারে, মারুফ কামাল খানও পাবেন। অমিত শাহই বলুক, তিনি খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন।

জনগণের দল বিএনপি বারবার জনগণকে জিম্মি করে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকে কেন?

ভুয়া বিবৃতি আর ভুয়া ফোন নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, অনেক পানি ঘোলা হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, বিএনপির আন্দোলনের জন্য মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি আর অমিত শাহ’র ফোন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? জনগণের দল বিএনপি বারবার জনগণকে জিম্মি করে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকে কেন? ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগেও বিএনপি জনগণকে ফেলে বিদেশিদের ওপর ভরসা করে ছিল। এতেই তাদের খেসারত দিতে হচ্ছে। আমার ধারণা ছিল, এরপর অন্তত বিদেশিদের ভুলে দেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখবে বিএনপি। কিন্তু ৫ জানুয়ারির বর্ষপূর্তিতে আবারও একই ভুল করেছে বিএনপি। সরকারের পাতা নিপুণ ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি জনগণকে জিম্মি করে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ করছে।

সাংবাদিকদের উস্কানিতে ডাকা এই অবরোধ কতদিন চলবে? আমার ধারণা কেউ জানে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যেকোনও সময় সরকার পতন হবে। তাই এমনকি বিশ্ব ইজতেমাকেও বিবেচনায় নেয়নি তারা। মনে হচ্ছে, অবরোধ প্রত্যাহার করলেই সরকার টিকে যাবে। বিএনপির আবাসিক নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। সরকারি দল বিএনপির আন্দোলন, অবরোধকে পাত্তাই দিচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই আমি। কিন্তু সরকার যদি বিএনপির দাবি না মানে, তাহলে কী তারা অবরোধ চালিয়ে যাবে?

বাস্তবতা হলো এটা সম্ভব নয়। তাহলে বেগম জিয়া কবে বাড়ি ফিরবেন, কবে অবরোধ শেষ হবে? বিশ্ব ইজতেমা বিএনপির জন্য আন্দোলনের এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটা দারুণ সুযোগ হয়ে এসেছিল। কিন্তু বিএনপি সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ইসলামী ধারার রাজনীতির মূলশক্তি বিএনপি বিশ্ব ইজতেমার সময় অবরোধ অব্যাহত রেখে প্রমাণ করেছে, তাদের কাছে ইসলামের চেয়ে ক্ষমতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত যেকোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, এমনকি ঘরে বসে পালন করা যায়, এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় রাজনৈতিক আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়। আর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমানদের সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ আসেন। এবার তাদের আসতে অবরোধের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিএনপি কীভাবে এই মিথ্যা আর আন্দোলনের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসে তা দেখতে কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

লেখক: সাংবাদিক ও অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied