প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার টি এম মুজাহিদুল ইসলাম।
ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করায় এক কিশোরীর পরিবারকে তিন মাস ধরে একঘরে করে রেখেছে সমাজপতিরা। শুধু তাই নয়, ওই তরুণীর বাবাকে দিন মজুরের কোনো কাজে নেয়া নিচ্ছে না এলাকাবাসী। সেই সঙ্গে নেয়া হচ্ছে না সামাজিক মসজিদের মুষ্ঠির চালও। এমনকি কিশোরীর চাচা আনোয়ার মারা যাওয়ার পর তার জানাজা ও মাটি দেওয়াতে অংশ নিতে দেয়নি ওই সমাজপতিরা।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাশিপুর মুন্সিটারী গ্রামে। গ্রামবাসীর এ আচারণের কথা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার সচেতনমহলকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পায়নি পরিবারটি। অবশেষে গত রোববার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন নির্যাতিতা ওই কিশোরীর বাবা মোকছেদ আলী। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার নিবার্হী অফিসার(ইউএনও) মো: শফিকুল ইসলাম ওই বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে পরির্দশন করে ঘটনার সত্যতা পান ।
লিখিত আবেদনে দিনমজুর মোকছেদ দাবি করেন, তার কিশোরী কন্যা বড়বাড়ি আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের এইচ এসসি দ্বিতীয় বষের্র ছাত্রী। সেখানে লেখাপড়া অবস্থায় তার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যৌন সর্ম্পক স্থাপন করে একই গ্রামের একাব্বর আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভবতী হলে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় আলমগীর।
এ অবস্থায় গত বছরের ৯ অক্টোরব মেয়েটি বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলা করার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে আসামীপক্ষ। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। মামলা তুলে না নেওয়া তারা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করে গত তিন মাস ধরে তাদেরকে একঘরে করে রাখে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এখানেই শেষ নয়, ওই এলাকাবাসী দিনমজুর মোকছেদকে কোনো প্রকার দিন হাজিরা (কামলা) নিচ্ছে না, নেয়া হচ্ছে না মসজিদের মুষ্টির চালও। এমনকি তার চাচাতো ভাই আনোয়ারুল মারা যাওয়ার পর তার জানাজা পড়তে ও মাটি পর্যন্ত দিতে দেয়নি গ্রামবাসী।
সরেজমিনে কাশিপুর গ্রামে গিয়ে একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মোকছেদের মেয়েতো খুব গুনার কাজ করেছে, তাদের সাথে উঠাবসা করলে নিজেদেরও পাপ হবে। ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখার সত্যতা নিশ্চিত করে একাধিক এলাকাবাসী জানান, র্ধষকের পরিবার খুবই প্রভাবশালী তাই কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এদিকে কিশোরীর বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ সুপার টিএম মুজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে সদর থানা পুলিশ ওই এলাকার তিন ফতোয়াবাজকে মঙলবার গভীর রাতে গ্রেফতার করে।