আর্কাইভ  বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ● ৪ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর –রংপুরে স্পীকার       রংপুরে বৃষ্টি নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার       কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল       

 width=
 

গাড়ি পুড়লে টাকা, মানুষ পুড়লে কি?

মঙ্গলবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৫, রাত ১১:৩২

অবরোধ নাশকতায় কোনো পরিবহনের শ্রমিক মারা গেলে সরকার বা মালিক পক্ষ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু কোন পরিবহনের যাত্রী মারা গেলে সরকার বা পরিবহন মালিক পক্ষ থেকে কোন অনুদান দেয়া হয় না।

এদিকে পরিবহন মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ সিটি এলাকায় গাড়িপ্রতি ১ লাখ টাকা, আর দূরপাল্লার গাড়ির জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করেছেন। সরকারও ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান হরতাল-অবরোধে শিশু, নারীসহ সাধারণ যাত্রীদের করুণ হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের কোনো ঘোষণা নেই। যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকাও করা হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে। এ জন্য সরাসরি কোনো সংস্থা নেই।

গত ১৪ দিনের হরতাল-অবরোধে নারী, শিশুসহ ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তোফাজ্জল নামে (১৮) এক পরিবহন হেলপার, ১১ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিবহন হেলপার মুরাজ হোসেন (২০) ও ১৫ জানুয়ারি কমলাপুর এলাকায় প্রাইভেট কার চালক আবুল কালাম (৩০) এবং রাজধানীর মগবাজারে এক যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগের দিন রংপুরে চলন্ত বাসে পেট্রলবোমায় ঘুমন্ত শিশুসহ ৫ যাত্রী নিহত হন। তাদের পরিবারে বইছে শোকের মাতম।

গত ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরের ড্রাইভার, সুপারভাইজার, হেলপার থেকে শুরু করে ৫৮ জন মারা যাওয়া স্বজন প্রতি পরিবারকে ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন যাত্রী পরিবার পরিজনদেরকে কোন অনুদান দেয়া হয়নি।

তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করলে অনুদান দেয়া হবে। এ পর্যন্ত কোন মারা যাওয়া যাত্রী স্বজনদের পক্ষ থেকে কোন আবেদন করা হয়নি।

২০ দলীয় জোটের ৫ জানুয়ারি থেকে চলা টানা অবরোধ-হরতালে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড এবং পরিবহন কর্মীদের হতাহতের তালিকা করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন। পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তালিকা করছে সড়ক পরিবহন সমিতি আর শ্রমিকদের জন্য তালিকা করছে শ্রমিক ফেডারেশন।

এ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে। পরিবহন নেতারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে যে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। তারা জানান, গত ৪ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু পরিবহন খাতে নাশকতায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা দাবি করেছেন, একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে ৩শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ পর্যন্ত ৭৮টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৪ শ্রমিক মারা গেছেন।

তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, গত ১৪ দিনে ১ জন প্রাইভেট কার চালক ও ২জন হেলপারসহ মোট ৩ জন পরিবহন শ্রমিক মারা গেছে। আর পরিবহন সেক্টরের ৫ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের সহিংসতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকরা এ অর্থ পেয়েছেন। আর ঢাকার পরিবহন মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সড়ক পরিবহন ফেডারেশন দেড় কোটি টাকা দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের।

এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সে সময় ৫৬ জন চালক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন বলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি।

নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের নামে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। একের পর নাশকতার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নাশকতায় কেবল পরিবহন কর্মীরাই নন, যাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর্থিকভাবে তা পূরণ করা কঠিন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদ্দুজ্জামান কামাল বলেন, হরতাল-অবরোধের সময় কলকারখানা, স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার ঠিক ঠাক চলছে। কিন্তু পরিবহনের ওপর কেন এই হামলা। হুমকি দিয়ে ঘরে বসে থাকবেন (বিএনপি নেত্রী) আর টোকাই দিয়ে গাড়ি জ্বালিয়ে দেবেন, এটা আর হতে দেয়া হবে না।

স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা বলেন, গত ৫৮ দিন আমাদের গাড়ি চলে নাই। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সব গাড়ি বসে যাবে। এ পর্যন্ত দেড় হাজার গাড়ি ধ্বংস করেছে। একটা রাজাকারের দল অবরোধ দিয়ে গাড়ি ভাংচুর করছে, আগুন দিচ্ছে, ধরতে পারলে ওই আগুনের মধ্যে ফেলে মারা হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিটি গাড়ি কেনেন ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায়। মুহূর্তেই তা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গাড়ির মূল্য ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিপূরণ কোনো সমাধান নয়। সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, সহিংসতায় নিহত পরিবহন শ্রমিকরা কিছু অর্থ পান। তাও অপর্যাপ্ত। তাদের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। এছাড়া আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণকারীরা কোনো ক্ষতিপূরণই পাননি অথচ উপার্জনে অক্ষম হয়ে গেছেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied