আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না

বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৫, দুপুর ১২:৫৬

মহিউদ্দিন মখদুমী

[caption id="attachment_37029" align="alignleft" width="350"] মহিউদ্দিন মখদুমী[/caption]

সাংবাদিক হলেই যেন সব জানতে হবে। এজন্য এখন আমজনতার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে। রাজনৈতিক অচল অবস্থার কি হবে ভাই? কি হতে পারে? ইত্যাদি প্রশ্ন শুনতে শুনতে এবং জবাব দিতে দিতে কাহিল। ভালো লেগেছে এই ভেবে যে, বাংলাদেশের কোলে জন্ম নেয়া সন্তানরা বা নাগরিকরা দেশটাকে সত্যিই ভালোবাসে। তারা কৌতূহলে জানতে চায় কোন পথে যাচ্ছে তাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সংকটে, সমস্যায় বাংলাদেশকে নিয়ে নাগরিকদের এই উদ্বিগ্নতা সত্যি মূল্যবান। দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও বলা যেতে পারে।

জ্বলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে দগ্ধ করা হচ্ছে বাংলাদেশের জীবন্ত সন্তানদের। নির্মম ভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হচ্ছে। কোথাও নিরাপত্তা নেই নাগরিকদের। সবাইকে আগুনে দগ্ধতা, গুম ও গুলির ভয় তাড়া করছে সকাল-বিকেল-রাত। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারলেই যা ইচ্ছে করো। ছিটকে পড়লেই জ্বালাও পোঁড়াও এবং লাশের সারি ফেলার হুংকারে আমাদের স্বাধীনতা লড়াইয়ের অর্জন বিপন্ন করতে বসেছে। তবে কি আমাদের মিশর, সিরিয়া, ইরাক,ফিলিস্তিন, লিবিয়া, পাকিস্তানও আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশকে দেখতে হবে? এমন ছিন্ন ভাবনা যখন মনে আসে তখন ভাবনা তাড়াতে চিৎকার করে বলি- দূর-হ বাজে ভাবনা। আমরা তো গৃহ যুদ্ধ কিংবা দলীয় সংঘাত চাই না। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির মতো নির্মল জীবন চাই। কেন জনতাকে পুঁজি করে খেলা হবে? বাংলাদেশটা করো দখল করা জমির মতো নাকি? বাংলাদেশের মালিকানা কোন দলের নামে লিখে দেয়া হয়েছে নাকি। যখন ইচ্ছে তখন বাংলাদেশের সবুজ জমিনে রক্তপাত ঘটানো হবে। হরতাল,অবরোধ, অসহযোগ ডেকে জনগণের জীবন-সম্পদ ধ্বংস করা হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না। ৭১-এ যুদ্ধ লব্ধ সবুজ বাংলাদেশ চাই।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি দেশ গড়ার। শপথ ছিল পাকিস্তানীদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা। নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অনন্য ভূমিতে পরিণত করা। কিন্তু স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মতো একজন উদার নেতাকে লোভীদের খপ্পরে পড়তে হয়েছিল। তাঁর চারিদিকে লালা ফেলে লোভীরা ঘুর ঘুর করতো। প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ভয়ে,জাতির কাছে নিজের দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে তিনি কারো লোভের কাছে পরাজিত হতে চাননি। তিনি সব ক্ষেত্রে অদম্য অনড় থেকেছেন। বঙ্গবন্ধুর দেশ প্রেম,অদম্যতা ও অনঢ়তার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল আজ স্পষ্ট তারা কতটা উচ্চ স্তরের লোভী ছিল। ঠিক তখনি অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ তার শ্রেষ্ঠ সন্তান হারিয়ে যে কান্না শুরু করেছিল। ১৯৭৮ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশের সেই কান্না আরও করুন সুর নিয়ে অনুরণিত হচ্ছিলো। এখনো হারাবার সেই বেদনায় অবিশ্রান্ত কাঁদছে বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইল কাঁদছে। ইস! বাংলাদেশ। তোমার নীরব কান্না আমাকে পোঁড়ায়। আবেগে আকুল করে তোলে। আমার কানে আজো তোমার সেই কান্নার শব্দ উড়ে উড়ে আসে। মন বলে আজকের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা সেই কান্নারই নেপথ্য অভিশাপ কি?

ভেবে দেখুন তো! প্রাকৃতিক ভাবে সোনার এই বাংলাদেশ দেখে মুগ্ধ হয় না কে? বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি। নদী তীরের অপার সৌন্দর্য, পাহাড়-হ্রদ-জল প্রপাত, সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন। এমন একটি সমৃদ্ধ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ রাজনৈতিক জটে আটকে উন্নয়নে এগুতে পারছে না, এ কথা বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু সত্য হলো, বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশের অবিশ্রান্ত সেই কান্নাই আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতির উপর। উন্নয়ন স্থবিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা যাই বলুন, এটি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হত্যা করার অভিশাপ। এই অভিশাপ মুক্ত হতে কত দিন লাগবে কে জানে। আজ এখন এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাঁদছে। আগুনে পোঁড়া সন্তানের জন্য কাঁদছে। অগ্নিদগ্ধদের চিৎকারে বার্ন ইউনিটে বসে কাঁদছে বাংলাদেশ। কান্নার শব্দে শব্দে বাংলাদেশ যেন তার মাতৃ-উদরে জন্ম নেয়া সন্তান বা নাগরিকদের কাছে দাবি করছে। যেন চিৎকার করে বলছে “আমাকে বদলে ফেলো নতুন চাদরে”। “আমাকে আচ্ছন্ন করো নতুন আলোয়”। “আমাকে অন্ধকার রাজনীতির কালো ধোঁয়া থেকে উদ্ধার করো”। উন্নয়নের শিখরে আমাকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দাও”। যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন,শুধু সচেতন তারাই শুনতে পাবেন বাংলাদেশের ওই বেদনাময় উচ্চারণ। গগণ বিদারী ওই চিৎকার। দেশ-প্রেমিক জনগণকে বাংলাদেশের কান্নার শব্দ বুকে ধারণ করে উঠে দাঁড়াতে হবে। শানিত প্রেমের চেতনায় বাংলাদেশকে বদলে দেবার লড়াইয়ে নেমে পড়তে হবে আজ,এখনি। ৪৪ বছর বয়সে পৌঁছে আজও বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। তবে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় যেতে কত সময় লাগবে?

হিসেবটা আমার ভাবনাতে আসে না। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশ কি নিজে নিজেই উন্নয়নে বদলে যাবে? বাংলাদেশকে বদলে দিতে হবে কি? যদি তাই হয় তবে বাংলাদেশকে বদলে দেবে কে, কারা? যদি বদলে দিতে হয় তবে তা কি ভাবে, কেমন করে, কোন উপায়ে? যাদুর পরশে কি বাংলাদেশ বদলে যাবে? সে কোন যাদুকর? কোথায় তার বাস? প্রকৃত কথা হলো-বাংলাদেশ কখনোই নিজে নিজে বদলে যাবে না। বদলে দিতে হবে। কোন যাদুর পরশে নয়। বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণই বাংলাদেশটাকে বদলে দেবার একমাত্র মাধ্যম । সচেতন শিক্ষিত দেশ প্রেমিক জনগণই পারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান, দুর্নীতি প্রতিরোধ, সু-শাসন, জবাবদিহীতা নিশ্চিত করণ ও বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন তরান্বিত করতে। বাংলাদেশকে উন্নয়নে বদলে দিতে। প্রধানত রাজনীতিতে বারবার সৃষ্ট সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধান না হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন স্থবির হয়ে বনসাইয়ে পরিণত হবে। এজন্য প্রয়োজন দেশের নাগরিকদের নিজেদের বদলানোর প্রক্রিয়া শুরু করা। নিজেকে বদলানোর মাধ্যমেই দেশ বদলানো শুরু করতে হবে। নিজেকে বদলানো মানে বাহ্যিক বদলানো নয়। মাথার ভিতরের মগজ বা বিবেককে বদলে ফেলা। বদলাতে হবে চিন্তার অনুষঙ্গ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই বদলে ফেলার,বদলে দেবার মতো চমৎকার সব স্ট্যাটাস দেন। দেখতে পাই। তারা এবং “এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না” বলে যারা মনে করেন আমি তাদের সহ সকলকে বলি- আসুন, এখনি বদলে ফেলার, বদলে দেয়ার মিছিলে শ্লোগান তুলি। নইলে স্বাধীন ভুমি ভূমিষ্ঠ করার পর থেকে যে কষ্টে আছে বাংলাদেশ তা আরও দীর্ঘ হবে।

লেখক: সাংবাদিকও উন্নয়ন কর্মী

মন্তব্য করুন


 

Link copied