আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

লালমনিরহাট-১ আসন: আ.লীগের ধাক্কা সামলাতে পারছে না ২০ দল

রবিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৫, দুপুর ০৩:১৬

আবু সাঈদ,পাটগ্রাম সংবাদদাতাঃ দেশজুড়ে চলমান অবরোধ এবং রাজনৈতিক অচলবস্থায় লালমনিরহাট-১ সংসদীয় এলাকা পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধার রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত এবং স্থিতিশীল থাকলেও ২০ দলীয় জোটের প্রধান দুই শরীক দল বিএনপি ও জামায়ত আবারও সরকারের রোষানলে পড়েছে। শুরু হয়েছে আবারও ধর পাকড়, পুলিশি তৎপরতা। ৫জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামীলীগের জন্য পৌষ পার্বনের পিঠা-পুলির উৎসব নিয়ে এলেও ২০ দলীয় জোটের জন্য যেন সর্বনাশ ডেকে এনেছে । এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় যেন বিএনপি-জামায়তের জন্য মরার উপর খড়ার ঘাঁ। বিতর্কিত, আতংকিত ২০১৪’র জানুয়ারি আবার ফিরে এসেছে ২০১৫ সালে। আতংক নিয়ে, ভীতি নিয়ে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বাউরা বাজার থেকে কাঠ ব্যবসায়ি হানিফা, ২০ জানুয়ারি খালিদ ও ওয়াজেদকে ধরে নিয়ে যায় পাটগ্রাম থানা পুলিশ। ২৩ জানুয়ারি রাতে পাটগ্রামের বাউরা বাজার থেকে মিঠু নামের এক কর্মীকে ধরেছে থানা পুলিশ। ২৪ তারিখ বাউরা বাজার থেকে জামাল নামে বিরোধীদলীয় আর এক সমর্থককে ধরে নিয়ে গেছে থানা পুলিশ। উপর্যুপরি এসব ধর পাকড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে। সন্ধ্যে হতে না হতেই বাজার শূণ্য। টহল পুলিশের আনাগোনা। হাতিবান্ধার পারুলিয়া থেকে হাফেজ গোলাম রব্বানী, হাতীবান্ধা ছাত্র দলের নোমান, জিশান, সাবেক নেতা ইউপি সদস্য মোকছেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে হাতিবান্ধা থানা পুলিশ নতুন বছরের জানুয়ারিতে। এসব নেতা-কর্মীর গ্রেফতার বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয়তাবাদী দলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন জানান, হাতীবান্ধার রাজনৈতিক অবস্থা শান্ত ও স্থিতিশীল থাকার পরও ধর পাকড় চলছে। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

৫ জানুয়ারির পূর্বে বাউরা হাইস্কুল মাঠের নির্বাচনী জনসভায় আলোচিত গাড়ী পোড়ানো মামলা,পাটগ্রাম যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মিন্টু হত্যা মামলা,সফিরহাট এলাকার দোকান পোড়ানো মামলা,রাস্তার গাছ কাটাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে করা মামলা মোকদ্দমায় ১৪ সাল ছিল বিএনপি-জামায়তের জন্য অগ্নিপরীক্ষার বছর । এসব মামলা মোকদ্দমায় এখনও শতশত কর্মী-সমর্থক ঘর-বাড়ি ছাড়া। তালিকাভুক্ত আসামীদের অনেকে মুচলেকা দিয়ে, আদালতে আত্মসমর্পন করে, হাজতবাস করে জামিন নিলেও অস্বস্তিতে দিন কাটছেন তালিকার বাহিরে থাকা দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। এইসব মামলার নামে কোন আইনি প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করেই হরহামেশাই কাউকে না কাউকে ধরেছে থানা পুলিশ । আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল এলাকায়। পারিবারিক শক্রতা মোড় নিয়েছিল রাজনৈতিক মামলায়। বাউরা বাজারের সেলুনের দোকানের কর্মচারী ১৭ বছর বয়সের জুয়েল ও সোহেল। এক দিন শোনা গেল এরা দুজন গাড়ী পোড়ানো মামলার আসামী। এ যেন মামলা মামলা খেলা । লা জবাব এ অস্থির অবস্থার শেষ কোথায় জানা ছিল না এ এলাকার বিরোধী রাজনীতির সমর্থকগোষ্ঠীর। একই আসামী এ সপ্তাহে জামিন নিচ্ছে তো ফি সপ্তাহে আবার থানা পুলিশের হাতে। পাটগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদ আদালত থেকে জামিনে বাড়ি ফিরেছে। মাসান্তে বাজারের রাস্তায় একদিন সাদা পোশাকের পুলিশ মোবাইল চোর মোবাইল চোর বলে চিৎকার করতে করতে রাশেদের পিচু নিল এবং তাকে পাকড়াও করল। এভাবে আসামী ধরার কোন বিধান আছে কিনা মানুষ জানে না। নিরীহ সমর্থক থেকে পদপ্রাপ্ত রাজনীতিক সবাই এই অদ্ভূত পুলিশি খেলায় ছিল ভীত সন্ত্রস্ত। রাত হলেই গেপ্তার আতংকে ঘর ছাড়া,বাড়ি ছাড়া। মাঘের কনকনে শীতে পুলিশি আতংকে ভুট্টা ক্ষেতে রাত কাটিয়েছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। মাছ বিক্রেতা, দিনমজুর, মুদি দোকানদার সবাই যেন স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে ছিটকে পড়েছিল। এদের অপরাধ এরা বিরোধীদলীয় রাজনীতিক-সমর্থক।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির হীন কদাকার রূপটি যেন বীভৎস আকৃতিতে ফুটে উঠেছিল সে সময়। ভাড়া দোকানে চায়ের ব্যাবসা করে সংসার চালাত বাবুল। একাধিকবার তার দোকানটি ভেঙ্গে দেয় সরকার দলীয় রাজনীতিকরা । এখন সর্বশান্ত বাবুল পথে বসেছে। পুলিশি আতংক পিছু ছাড়ে নি তার। গাড়ি, দোকান ভাংচুর কিংবা তুচ্ছতম ক্ষতিতে সরকারদলীয় লোকেরা লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও বাবুলের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ নেই কোন বরাদ্দ। এমন অসংখ্য বিরোধীদলীয় সমর্থক দোকানপাট হারিয়ে এখন সর্বস¦ান্ত ।

৪ জানুয়ারি ২০১৪ কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সরকারদলীয় রাজনীতিকদের হাতে পাটগ্রামের সফিরহাট বাজারে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় ফারুক ও মোবারক নামের জাতীয়তাবাদী যুবদলের দু’জন কর্মী। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে অভিয্ক্তু করে একটি মামলা হলেও মামলার ১টি বছর পার হলেও একজন আসামীকেও গ্রেফতার করে নি থানা পুলিশ। পাটগ্রাম থানা পুলিশের নীরবতায় হতাশা নেমে এসেছে ঐ দুই মৃতের পরিবারে। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্র দলের কর্মী নাসির। পাটগ্রামের মীর্জারকোট সরেও বাজার এলাকায় একই দিনে একই স্পটে প্রাণ হারিয়েছে বিএনপি-জামায়তের ৩জন কর্মী। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোনটার নামে মামলা হলেও থানায় ফ্রীজ্ড হয়ে পড়ে আছে এসব মামলা। অথচ সফির হাটের বাঁশ কাটার ঘটনায় জামায়ত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক উল্লেখ করে পাটগ্রাম থানা পুলিশ ৬ ব্যক্তির নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে বলে ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ একটি জাতীয় ইংলিশ ডেইলি খবর ছেপেছে। পুলিশের এই দ্বৈত নীতির খেলায় পড়ে পুলিশ প্রশাসনের উপর থেকে উঠে যাচ্ছে মানুষের আস্থা, প্রশাসনের প্রতি হারাচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের।

২০১৪’র জানুয়ারি পুড়োনো ক্ষত নিয়ে ভুতের পিঠে সওয়ার হয়ে আবার যেন ফিরে এসেছে ২০১৫ তে। তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও সরকারের উপর্যুপরি দমন-পীড়ন,মামলা-হামলা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ২০ দলীয় জোট। চলমান আন্দোলন সংগ্রামে স্থবিরতা এসে গেছে। এ অবস্থায় সবাই তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে।

নতুন করে এসব ধর পাকড় বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু পাটগ্রাম-হাতীবান্ধার রাজতৈকিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে স্বীকার করে বলেন,‘এ স্থিশিীলতার পরও কেন ধর পাকড় চলছে আমি জানি না। ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে ফিরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied