
সেদিন দু/এক জন নেতা অবশ্য এর বিপক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন।এ নিয়ে ঐ দিন গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধও হয়েছিল।তবে তর্ক বিতর্কের পর সবাই একমত হয়েছিলেন-প্রধানমন্ত্রী আসলে তাকে স্বাগত জানানো হবে।কিন্তু অদৃশ্য সুতোর টানে সেদিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা না জানানোয় গেট থেকেই শেখ হাসিনাকে ফিরে যেতে হয়।এর মধ্যদিয়ে দেশ আরেক বার হতাশার রাজ্যে নিপতিত হয়।বলাবলি হচ্ছে এর মধ্যদিয়ে আরেকটি সংলাপের সুযোগ হেলায় হারালো বিএনপি।
গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবিয়োগের খবর পেয়ে সান্ত্বনা দিতে গুলশানে খালেদার কার্যালয়ে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।কিন্তু চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের গেট বন্ধ থাকায় প্রধানমন্ত্রীকে ফিরে যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়ার এই সিদ্ধাকে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি।দলের ভেতরে এই অবস্থা অনুধাবন করে পরের দিন বিএনপি স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করে নিজেদের ভুল স্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন।
ঐ দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, “দলে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়ার লোক নেই। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। আমরা সবাই একমত হয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী আসলে তাকে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু দুইএকজন দ্বিমত পোষণ করেছিল। তখন আমি বলেছিলাম- আমরা সভ্য দল। আমরা অসভ্য আচরণ করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “তার (প্রধানমন্ত্রী) সাথে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। কিন্তু তিনি আসলে তাকে স্বাভাবিক সৌজন্য দেখাতে হবে। এরপর সবাই একমত পোষণ করেছিলন। কিন্তু এরপরও অজ্ঞাত কারণে গেট বন্ধ ছিল, যেটা আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কেউ জানতো না। আর ম্যাডাম তো ঐ দিন অজ্ঞানের মতোই ছিলেন। তিনি পুত্রশোকে মুহ্যমান ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কেউ কথাও বলতে পারি নাই। এখনও (২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্ভবপর হয়নি।”
গতকাল (২৫ জানুয়ারি) মওদুদ আহমদ গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে সৌজন্য না জানানো ঠিক হয়নি।’ তার এই বক্তব্য নিয়েও দলের মধ্যে সমালোচনা হয়েছে। অনেকে বলছেন, এটা মওদুদ আহমদ ঠিক বলেননি। তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বলছেন।
তবে এ বিষয়ে মওদুদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে দলের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ রাগান্বিত হয়েছেন। কিন্তু অনেকেই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
ভুল স্বীকার করে মওদুদের বক্তব্য দেওয়ার পরপরই দলটির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছলনা করতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এক দিকে খালেদা জিয়ার নামে মামলা দিয়েছেন। অন্যদিকে তাকে লোক দেখানো সান্ত্বনা দিতে গেছেন। এটা কুমিরের কান্না।’
দলের মধ্যে প্রায় একই সময়ে দুই ধরণের বক্তব্য এনিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে বলছেন, এ ইস্যুতেই বিএনপি নেতারা একমত হতে পারলেন না।
দলের মধ্যে এক ইস্যুতে দুই ধরণের বক্তব্য কেন? জানতে চাইলে মওদুদ বলেছেন, ‘রিজভী ঠিকই বলেছেন। তার বক্তব্যের সাথে আমার দ্বিমত নেই। কারণ সরকার বেগম জিয়ার নামে মামলা দিয়ে অন্যায় করেছেন। তিনি তো ছলনাই করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো এক জিনিস। আর কর্মসূচি, বক্তৃতা, বিবৃতি আরেক জিনিস। প্রধানমন্ত্রীর অপশাসন ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তো আমাদের কর্মসূচি চলছে। এটা নিয়ে তো কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তিনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন বেগম জিয়ার কার্যালয়ে এসেছেন তখন তাকে স্বাগত জানানোটা স্বাভাবিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘যদি বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকতেন আর শেখ হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলে থাকতেন। আর যদি এরকম হতো তাহলে আমাদের কাছে কেমন মনে হতো। বিষয়টি এভাবেই চিন্তা করা উচিত।’
সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ঐদিন সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের বাইরে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেটা অস্বাভাবিক।’ এ ঘটনায় তিনি দলটির গুটিকয়েক নেতার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেন। যদিও কে বা কারা এর সাথে জড়িত সে বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। ঢাকাটাইমস