ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ২৭ জানুয়ারী॥ স্ত্রী ও সন্তানদের গগন বিদারক কান্নার আহাজারীতে আকাশবাতাস ভারী করে তুলেছিল নীলফামারী সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের সহাদেব বড়গাছা বানিয়াপাড়া গ্রামটি। লাগাতার অবরোধে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হবার ৬ দিন পর মারা যাওয়া ট্রাকের যাত্রী আবদুল মালেকের (৫৫) এই গ্রামেই বাড়ি। তার মেজ ছেলে আব্দুল মতিন নিজেও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ইউনিয়ন মৎস্যজীবি দলের সভাপতি আব্দুল মতিন কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন আমি বিএনপির রাজনীতি করে দলের ডাকা লাগাতার অবরোধে উপহার হিসাবে পিতার লাশ পেলাম। মতিন বলেন ঢাকায় একটি তৈরী পোষাক কারখানায় কাজ পেয়েছি সেখানে চলে যাবো ভাবছি।
লাগাতার অবরোধে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হবার ৬ দিন পর মারা যাওয়া ট্রাকের যাত্রী আবদুল মালেকের চেহারাটি স্ত্রী ,ছেলে মেয়ে শুধু নয় গ্রামের কেউ চিনতেই পারছিলনা। পেট্রোল বোমার দগ্ধতায় তার চেহারাটি বিকৃত করে দিয়েছিল। সোমবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর লাশের শরীরে পচন ধরেছিল। ফলে রংপুরে ময়না তদন্ত শেষে আব্দুল মালেকের লাশ নীলফামারীর গ্রামে নিয়ে এসে মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে জানাজার নামাজে শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কান্না বিজরিত কন্ঠে মৎস্যজীবি দলের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মতিন এ ভাবে তার ক্ষোভের কথা গুলো বলছিলেন।
নিহতের বড় মেয়ে মাজেদা খাতুন (৩০) ক্ষোভের সাথে বলেন, দুই নেত্রী ঠিকই থাকবে, আমরা বাবা হারাবো,ভাই হারাবো, স্বামী হারাবো, স্বজন হারাবো। এমন রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না।
নিহত আব্দুল মালেকের বড় ছেলে, আব্দুল মোত্তালেব (২৮) জানান, বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে গত ১৬ জানুয়ারী তার বাবা ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা হন। এজতেমা শেষে কয়েকদিন ঢাকায় অবস্থানের পর অবরোধের কারনে ট্রাকে করে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওয়ানা হন। ২১ জানুয়ারী ট্রাকটি সান্তাহার ফুলবাড়ি হয়ে রাত সারে আটটার দিকে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ভাঁদ গাঁ নামক স্থানে এলে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ট্রাকে পেট্রলবোমা ঘটনায় চালকসহ দগ্ধ হন ওই ট্রাকের যাত্রী আমাদের পিতা আব্দুল মালেক।
তাকে প্রথমে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে মারা যান তিনি।মোত্তালেব জানান তারা তিন ভাই দুই বোন। তিন ভাই এক বোনের বিয়ে হয়েছে, ছোট বোন লিপি আক্তার সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। মা মমতা বেগম স্বামী হারানোর শোকে থেকে থেকে মুর্চ্ছা যাচ্ছেন।বাবা স্বর্ণকারের কাজ করতেন, তাদের সহায় সম্বল বলতে আছে তিন বিঘা কৃষি জমি।মোতালেব ভাংড়ীর ও ছোট ভাই আব্দুল হাকিম (২০) হরেক মালের ব্যবসা করেন। হাকিম বলেন আমরা যে গাছের ডালে বসেছিলাম সেই ডালটি কেটে ফেললাম। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন এমন রাজনীতি কি আমরা চেয়েছিলাম?
এদিকে নীলফামারী সদর উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার সর্তে¡ বলেন বিষয়টি মর্মান্তিক। আমরা ওই পরিবারটিকে দলের পক্ষে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করছি।