আদি যুগ থেকে রূপ ও ত্বক চর্চায় মানুষ বিভিন্ন ধরণের জিনিস ব্যবহার করে আসছে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে রূপ ও ত্বক চর্চায় মানুষ আরও বেশি যত্নবান হয়ে উঠে। ফলে এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কোম্পানী নানা ধরণের প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন করে তা বাজারে ছেড়েছে।প্রতিযোগিতামূলক এই বাজার ব্যবস্থায় বিভিন্ন নামী-দামী কোম্পানী তাদের পণ্যের মান উন্নত ও গ্রহণযোগ্য করার বহু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রংপুর অঞ্চলে নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ, ও ক্ষতিকারক প্রসাধনী সামগ্রী প্রকাশ্যে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে দোকানীরা। চাকচিক্য মোড়ক সমৃদ্ধ ও এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে রুপ চর্চায় মনোযোগী নারীরা প্রতারণায় পড়ছে অহরহ। স্নো, সাবান, লিপিষ্টিক, নেইল পলিশ, বডি স্প্রে, সুগন্ধি, লোশন, নারিকেল তেল, আফটার সেভ লোশন, সেভিং ক্রীম, টুথপেষ্ট সহ বিভিন্ন ধরণের রূপ ও ত্বক চর্চার প্রসাধনী পণ্য এখন প্রতিনিয়ত নকল ও ভেজাল হচ্ছে ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর নগরীর প্রসাধনী পণ্যের বৃহৎ বাজার নবাবগঞ্জ বাজার সহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকান ও এ অঞ্চলের সকল বাজারে নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বেনামী কোম্পানীর পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে । নামী-দামী কোম্পানীর ফেলে দেয়া মোড়ক ও জার/তেল/বোতল/টিউব সংগ্রহ করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি সেগুলোতে নিম্নমানের পণ্য ঢুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। সে ক্ষেত্রে মেয়াদের স্থানে সুকৌশল নতুন মেয়াদ লিখে দেয়া হয় । ফলে দোকানী ও ক্রেতা কারও পে নকল চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। অবশ্য কোন কোন দোকানী স্বেচ্ছায় ক্রেতা যদি কখনো অভিযোগ করে তখন তাকে বলা হয় কোম্পানী যা দিয়েছে তাই বিক্রি করা হয়। ফলে ক্রেতা আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না ।
এছাড়া কিছু বেনামী কোম্পানী তাদের পণ্যের মোড়ক নামী কোম্পানীগুলোর মত হুবহু সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে হঠাৎ করেই ভুল করে কিনে নেয় ক্রেতারা। যেমন, মেরিলের স্থানে মেরিট, ফেয়ার এন্ড লাভলীর স্থলে ফেয়ার এন্ড লাডলী, লাইফ বয়ের স্থলে লাইফ জয়, তিব্বত এর স্থলে তিব্বাত উল্লেখযোগ্য । বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে এই নামীয় প্রসাধনী পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে ।
এদিকে কিছু কিছু ব্যক্তি নিম্নমানের ও মেয়াদ উত্তীর্ণ বিদেশী পণ্য এনে নতুন মেয়াদে বাজারে ছাড়ছে। আর ক্রেতারা বিদেশী প্রসাধনী ভেবে তা নিয়ে ব্যবহার করায় বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার জিঞ্জিরা ও নীলফামারীর সৈয়দপুর এসব নকল ও ভেজাল পণ্য তৈরী করা হয় । যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে রংপুরের বাজারে ছাড়া হয় এবং কম মূল্য হওয়ায় বেশী লাভের আশায় তা কিনে নেয় দোকানীরা ।
উল্লেখ্য রংপুর একটি বিভাগীয় মহানগর হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অভিযান চালানো হয়নি । ফলে রংপুরের প্রসাধনীর দোকানগুলোতে আজও চাকচিক্যভাবে শোভা পাচ্ছে এসব পণ্য। আর ফেরিওয়ালারা নির্ভয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নকল প্রসাধনী পণ্য বিক্রি করছে। ফলে রূপ ও ত্বকের ক্ষতি হলেও প্রশাসন এদিকে নজর দিচ্ছে না ।