আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

সুবিধা বঞ্চিত আদিবাসী এবং সুবিধাবাদী গোষ্ঠী

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০১৩, সকাল ০৯:১৩

বিভূতি ভূষণ মাহাতো

পূর্ববঙ্গ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ (East Bengal State Acquisition and Tenancy Act,1950) এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধিত) আইন, ২০০৪ (The State Acquisition and Tenancy (Amendment)Act, 2004) এ আদিবাসীদের Aboriginal’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আদিবাসীদের বানানো হচ্ছে ”ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।'' কিন্তু বাংলার আদিবাসী জনগণ এটি কখনও মেনে নেয়নি এবং মেনে নেবেও না।কারো নাম কেউ খেয়াল খুশিমতো পরিবর্তন করবে আর সেটা কি সে মেনে নেবে? কখনো না। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ণয় নিয়েও চলছে গড়িমসি। “বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নাই” - এ কথাও বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

২০১০ সালে “জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০” প্রণয়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসীদের “আদিবাসী” উল্লেখ করে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার ২০১০ সালেই “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক বিল-২০১০” নামে একটি আইন পাশ করে। এই আইনে সরকার আদিবাসীদেরকে ”ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী” বলছে। আবার এই একই আইনে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে। তালিকাভুক্ত করা হয়েছে মাত্র ২৭ টি জাতিগোষ্ঠীকে। এই আইনে বাদ পড়ে গেছে অনেক প্রকৃত আদিবাসী। জাতিগোষ্ঠী হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে আদিবাসীদের গোত্রগুলোকে এবং অ-আদিবাসীকে। বাদপড়া আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী। বাদপড়া আদিবাসী সম্প্রদায়সমূহ- সিং, মাহাতো, রবিদাস, মালো, মাহালী, রাজোয়ার, কর্মকার(লহরা), কোলকামার, তেলী, পাটনী,বেদিয়া, ভুইমালি, তুরি, বেদিয়াসহ আরো অনেক। তালিকাভুক্তি থেকে বাদ পড়ার কারণে এই সকল জাতিগোষ্ঠীর জনগণ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে আদিবাসী প্রত্যয়ন নিতে পারছে না এবং কোন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং কলেজসমূহ) ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। এবং চাকুরী ক্ষেত্রেও কোটার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তি ও সরকারী চাকুরীতে কোটার যথাযথ সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ফলে সকল আদিবাসী জনগণ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে।

যে সম্প্রদায়ের জনগণ নিজেদের আদিবাসী বলে স্বীকার করেনা সরকার তাদের গেজেট-ভুক্ত করেছে। এর ফলে তারা আদিবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাগুলো গ্রহণ করছে। এতে প্রকৃত আদিবাসীরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। যাদের নিজস্ব কোন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সামাজিক ব্যবস্থা ও বিধান নাই তবুও সরকার তাদেরকে আদিবাসী বলছে।

উত্তরাঞ্চলের “বর্মণ” সম্প্রদায়ের জনগণ নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে কখনো স্বীকার করে না। তাদের নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সামাজিক ব্যবস্থা ও বিধান বলতে কিছুই নেই। কিন্তু তারা আজ আদিবাসী কোটার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা সরকারী চাকুরীতে ঢুকে যাচ্ছে। তাই সরকারকে বলতে চাই যে আদিবাসীদের “আদিবাসী” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সকল প্রকৃত আদিবাসীদের তালিকাভুক্ত করা হোক এবং সুবিধাবাদী অ-আদিবাসীদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

লেখক: আহ্বায়ক, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এবং সহ-সভাপতি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied