আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

গল্প: ফেকবুক -- মুরাদ মাহমুদ

সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০১৩, বিকাল ০৫:৪৬

-হাই

-হ্যালো

-আমি সজিব, রংপুর।

- আমি অনন্যা, লালমনিরহাট, থাকি রংপুর।

- কি করেন আপনি?

- অনার্স ফাইনাল ইয়ার। বাংলা। রংপুর সরকারী কলেজ। আপনি কি করেন?

- আমি একাউন্টিং এ মাস্টার্স করছি। কারমাইকেল কলেজে।

এভাবেই ফেসবুক চ্যাটিং এর মাধ্যমে পরিচয় টা শুরু হয়ে ছিল সজিব আর অনন্যার। এর পর প্রতিদিন দুজনের দীর্ঘ সময় ধরে চ্যাটিং করতো। এর পর মোবাইল নম্বর দেওয়া-নেওয়া। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। সময়ের সাথে দু’জন দু’জনের ভালো বন্ধু হয়ে উঠে। এর পর এক দিন দু’জন দেখা করে। আস্তে আস্তে দু’জনের দেখা করা, আড্ডা দেওয়া রুটিনে পরিণত হয়। দিন যায় সজিব- অনন্যার সম্পর্ক আরও বেশী গভীর হয়ে উঠে। রাতের পর রাত মোবাইলে কথা বলে সময় কেটে যায় দু’জনের। দুজনের মধ্যে খুব অল্প সময়ে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কিন্তু বন্ধুত্বের সেই সম্পর্ক বেশী দিন থাকেনি। বন্ধুত্বের সিঁড়ি বেয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপ নেয়। ফেস বুকের অচেনা অদেখা মানুষ দু’টি খুব আপন হয়ে উঠে। ভালোবাসার এ সম্পর্ক শুধু ফেসবুক আর মোবাইলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সময় পেলেই দুজন ছুটে যেত দুজনের কাছে। একান্তে আগামী দিনের স্বপ্ন বুনতো দু’জন।

দু’জন দু’জনকে ছাড়া যেন কিছুই বুঝে না। এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েক মাস। অনন্যার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। অনন্যা বেশ কিছু দিনের জন্য বাড়িতে চলে যাবে বলে সজিবকে জানায়। সজিবের মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। অনন্যা সজিবকে অনেক বোঝানোর পর সজিব রাজি হয়। সজিব এবং অনন্যার চোখ দুটি ছলছল করে উঠে। অনন্যা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। সজিবকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সজিবের চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে অনন্যার শরীরে।

অবশেষে অনন্যা লালমনিরহাট তার বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে যাওয়ার পর সজিব খুব একা হয়ে যায়। আবার তারা ফিরে যায় মোবাইল আর ফেসবুকে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে কথা বলে সময় কেটে যায়। রাত ভোর হয় ফেসবুকে চ্যাটিং করতে করতে। দু’জন দু’জনকে দেখার জন্য হাফিয়ে উঠে। এভাবে মাস খানেক চলে যায়। হঠাৎ অনন্যাকে আর মোবাইলে পাওয়া যায় না তার মোবাইল বন্ধ। ফেসবুকে অনলাইনেও দেখা যায় না অনন্যাকে। অজ¯স্রবার ফেসবুকের ইন-বক্সে ও মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায় না। সজিবের মন হাহাকার করে উঠে। তবে কি অনন্যা সজিবকে ফাঁকি দিয়েছে? কিন্তু এমনটা তো হবার কথা নয়। সজিব ছুটে যায় অনন্যার মেসে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। মেস মালিক জানায় অনন্যা মেসের সিট ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। নিরাশ হয়ে ফিরে আসে সজিব। মানুষিক ভাবে সে বিপর্যস্ত হয়ে পরে। সজিব কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না অনন্যা তাকে ফাঁকি দিবে। সাপ্তাখানেক পর সজিব অনন্যা কে আবার মেসেজ দিতে ফেসবুকে ঢুকে দেখে অনন্যা সজিব কে ম্যাসেজ দিয়েছে। সজিব দ্রুত ম্যাসেজটি পড়তে থাকে। অনন্যা লিখেছে:-

সজিব, জানি তুমি ভালো নেই। আমি ছাড়া তুমি কখনও ভালো থাকতে পারো না। খুব অল্প সময়ে আমাদের মাঝে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল তা সত্যি অতুলনীয়। তোমার কাছ থেকে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি তা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু তুমি যে বিশ্বাস নিয়ে আমাকে ভালবেসেছিলে আমি সে বিশ্বাস রাখতে পারিনি। আমি তোমার সাথে প্রতারণা করেছি। তোমার ভালোবাসার মোহে আমি এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে সত্যিটা বলা হয়নি। কিন্তু আজ সত্যিটা বলতেই হচ্ছে। আমি জানি তুমি এটা সহ্য করতে পারবে না। তবুও আমি না বলে পারছি না।

সজিব, আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে লেখা-পড়া করি তখন আমার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দুয়েক পরে আমার স্বামী মালয়েশিয়ায় চলে যায়। আমাকে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা থাকলেও আমার অনার্স শেষ না হওয়ায় এবং গ্রীনকার্ড জটিলতায় যেতে পারিনি। আমার অনার্স শেষ হবার পর অমার স্বামী দেশে গিয়ে আমাকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসেছে। আমি এখন তোমা হতে অনেক দূরে।

তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না। শুধু অনুরোধ করবো, আমাকে মন থেকে মুছে ফেলো। আর হয়তো তোমার সাথে কথা হবে না, দেখা হবে না। ভালো থেকো।

 লেখাগুলো পড়তে পড়তে সজিবের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো কম্পিউটারের কি বোর্ডে। তার হৃদয় ভাঙ্গা হাহাকার দেখার কেও থাকলো না।

(পাঠক, সজিবদের হাহাকার কোন দিনই অনন্যাদের কানে পৌঁছাবে না। তাই যে কোন সম্পর্ক করার আগে ভালো করে তার সমন্ধে জেনে নিন)

সম্পূর্ণ কাল্পনিক

মন্তব্য করুন


 

Link copied