আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

৬০ হাজার হেক্টর জমির আবাদ হুমকিতে; তিস্তা ব্যারেজ কোন কাজে আসছে না

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৩, দুপুর ১০:৪৭

সেন্ট্রাল ডেস্ক: হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ থেকে কোন সুফল আসছে না, বরং ব্যারেজটি এখন কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন পানির প্রয়োজন তখন তিস্তা ব্যারেজ থেকে পানি না পেয়ে হতাশায় ভুগতে হয়। আর পুরো বর্ষা মৌসুমে যখন নদী-নালা খালবিল ভরাট থাকে তখন ভারত তার ফারাক্কা ব্যারেজের সবকয়টি গেট খুলে দিয়ে উত্তরাঞ্চলকে বন্যায় পরিণত করে। ফলে সে সময় হাজার হাজার কৃষকের আবাদী ফসল ডুবে বিনষ্ট হয়। ভারতের এহেন কারসাজিতে বাংলাদেশ সরকার দৌড়ঝাঁপ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। ফলে শুষ্ক মৌসুমে যখন ইরি-বোরো আবাদের সময় তখন তিস্তার ব্যারেজের উজান ও ভাটিতে দেখা দেয় বিশালকায় মরুভূমি। যেমনটি হয়েছে এ বছরও। চলতি শুকনা মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে পানি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন পাউবো দপ্তরে দপ্তরে ধরনা দিচ্ছে শত শত ইরি-বোরো চাষী। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প পাউবো'র তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে এ মৌসুমে সেচের পানিও কৃষক পাচ্ছে না। ফলে সেচ সঙ্কটের শঙ্কায় উত্তরের বোরো আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা সূত্র জানায়, এ বছর এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭শ ১০ মেট্রিকটন। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিস্তা ব্যারেজ থেকে সঠিক সময়ে ন্যায্য হিস্যায় পানি পেলে এর উৎপাদন ৮ লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু সঠিক সময়ে পানি না পাওয়ায় প্রতিবারেই কৃষক উৎপাদনের মার খাচ্ছে। এতে ভেঙ্গে যাচ্ছে কৃষকের কোমর।

এ ছাড়া সূত্র আরো জানায়, ফারাক্কা শুষ্ক মৌসুমে পানি না ছেড়ে বন্যার সময় তার সবগুলো গেট খুলে দিলে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যায় অসংখ্য বাড়িঘর। এতে প্রতি বছরে গৃহহারা হয় তিস্তা পারের শত শত পরিবার। অপর দিকে ভরা রবি মৌসুমে পানি না পেয়ে পথে বসে হাজার হাজার কৃষক।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল হক এর ভাষ্য মতে, তিস্তা ব্যারেজের স্বাভাবিক সেচ কার্যক্রম চালাতে পানি প্রয়োজন ১০ হাজার কিউসেক। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেড় থেকে দু'হাজার কিউসেকের বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী এই দাবি করলেও গত বুধবার সকালে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় গিয়ে একটি ক্ষীণ প্রবাহে নদী বয়ে যেতে দেখা গেছে। ৪৪টি গেটের মধ্যে চারটি গেট খুলে রেখে সবকটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেগুলোতেও পানির কোন প্রবাহ নেই। বন্যার কারণে আমন ফসলের ক্ষতিতে কোমর ভেঙে যাওয়া চাষীরা এখন তাকিয়ে আছে তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে কবে নাগাদ সেচ সুবিধা দেয়া হবে তার ওপর। কিন্তু ধান রোপণের পর এ পর্যন্ত সঠিকভাবে পানি না পাওয়ায় ধানের পাতাগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকের মুখ থেকে মুছে গেছে হাসি। পানি প্রাপ্তির ওপরই নির্ভর করছে সব কিছু। পাউবো কর্তৃপক্ষ কৃষকদের নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। ভারত ডালিয়ার মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজালডোবা ব্যারেজ দিয়ে তিস্তা নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করে তাদের রাজস্থান প্রদেশে সেচ কাজ করায় তিস্তা নদীতে পানি সঙ্কট তৈরি হয়। এছাড়া নাব্যতা কমে গিয়ে তিস্তায় এখন মাইলের পর মাইল জুড়ে ধু ধু বালুচর। লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার সীমান্তে তিস্তা নদীর ওপর ব্যারেজ নির্মাণ করে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে পাউবোর সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্পটির প্রথম ফেজের কাজ দফায় দফায় পিছিয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। কিন্তু এরপরও প্রকল্প থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী সেচ প্রদান সম্ভব হয়নি তিস্তায় পানি প্রাপ্তিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কোন চুক্তি করতে পারেনি। উত্তরের ৩৫টি উপজেলায় তিস্তা প্রকল্প হতে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে নেয়া হয় সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্প। লক্ষ্য ছিল এই ৩৫ উপজেলায় ১৩ লাখ ৩৫ হাজার একর জমিতে সেচ প্রদান। ব্যারেজটি ডালিয়ায় নির্মাণ শেষ হয় এরশাদ শাসনামলে ১৯৯০ সালের ৫ আগস্ট। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজ শেষ করার চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করা হলেও তা কয়েক দফা পিছিয়ে এ ফেজের কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালের জুনে। এতে কয়েক গুণ ব্যয় বেড়ে মোট খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। যার উল্লেখযোগ্য অর্থ যোগান দেয়া হয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করে এডিবি, আইডিবি, এসএফডি, আবুধাবি ফান্ডসহ কয়েকটি বিদেশী দাতা সংস্থা। এভাবে প্রথম ফেজের কাজ শেষ করা হলেও তা কমিয়ে পুনর্নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী এক লাখ ১১ হাজার একর জমিতে সেচ দেয়ার টার্গেট সিকি ভাগও সফলতা পায়নি। যদিও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী প্রকল্প সফল। টার্গেট অনুযায়ী মোটামুটি সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদনও কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু কৃষকরা বলছে ভিন্ন কথা, এ প্রকল্প যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে তার সিকি ভাগ সফলতাও তারা পাননি। তারা বলছেন আমাদের সঙ্গে বারবার পাউবো এবং সরকার উভয়েই প্রতারণা করছেন। কেননা তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য এ ব্যারেজ নির্মাণ করা হলেও হতদরিদ্র কৃষকদের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ভারতই। তাই অনেক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এ প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ৬০ হাজার কৃষকের মাঝে। যে কোন সময়ে তারা এর বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। সুধীমহল বলছে, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প হাতে নিয়ে সরকার কৃষকদের বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় জমিগুলো থেকে চাহিদামত ফসল তারা পাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন


 

Link copied