দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগের উপ-পরিচালক মোকলেসুর রহমান জানান, প্রতিবছর এই জেলার উৎপাদিত লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা ও তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। লিচু লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ বেড়েই চলছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার জেলায় রেকর্ড পরিমাণ বাম্পার লিচুর ফলন হবে। এখন পর্যন্ত জেলার লিচু বাগানে ও বসত বাড়ীতে অর্জিত লিচু গাছের মুকুল থেকে লিচুর গুটি ভাল রয়েছে। ভালো ফলনের আশায় লিচু চাষীরা পরিচর্যা পুরো দমে চালিয়ে যাচ্ছে। চাষীদের সহযোগীতা করতে কৃষি অধিদপ্তর এবং হটিকালচার বিভাগ থেকে অব্যাহতভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, গত ২০০৯ সালে,জেলায় লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। ২০১০ সালে তা এসে দাড়ায় ১ হাজার ৭৮০ হেক্টরে, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৫৬ হেক্টর এবং ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর। চলতি বছর ২০১৩ সালে লিচু চাষের জন্য জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৭শ হেক্টরে বেড়ে গেছে। চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ২ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় সারাদেশ ব্যাপী এর চাহিদা বেশী।
দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রী, চায়না ফোর, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উলেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর, মাসিমপুর, পুলহাট, সিকদারগঞ্জ, মহব্বতপুর, উলিপুর, খানপুর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু চাষ উলেখযোগ্য। এই এলাকার মাটির কারণেই উৎপাদিত বেদেনা লিচু সুস্বাদু এবং উন্নত মানের হয়ে থাকে। অন্য এলাকার বেদেনা লিচুর চেয়ে এই এলাকার বেদেনা লিচু সকল ধরনের গ্রাহকের নিকট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাইব্রিড জাতের লিচু চায়না টু, চায়না থ্রি, চায়না ফোর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ীসহ জেলার ১৩টি উপজেলাতেই ব্যাপকহারে বাগান গড়ে উঠেছে। মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে লিচুর বাগান আগাম ক্রয় করে লিচু গাছের পরিচর্যা শুরু করেছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাড়ীর বসতভিটায় বা আঙ্গিনার লিচু গাছে মুকুল থেকে গুটি বের হয়েছে। লিচু গাছের মুকুলের সাথে সাথে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝি ঝি পোকার ঝি ঝি শব্দে এলাকা মুখরিত শুরু করেছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের আদর্শ লিচু চাষী আব্দুর রাজ্জাক (৪৮) জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সাথে সাথে পরিচর্যা শুরু করতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছগুলোতে ফুল আসার সাথে সাথে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন। তার ৩ একর জমি দুটি লিচু বাগান রয়েছে। ২৯৫টি লিচু গাছের মধ্যে ৮২টি রয়েছে বেদেনা লিচুর গাছ এবং দেশি ও হাইব্রিড জাতের চায়না থ্রির গাছ রয়েছে ২১৩টি। এ দুটি বাগান তিনি ১ বছরের জন্য ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাগানের বয়স প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর হবে। যত দিন যাতে লিচুর গাছে ফল বেশি ধরবে এবং দামও বাড়তে শুরু করবে। এছাড়াও তার বাড়ীতে ৪টি লিচুর গাছ রয়েছে এর মধ্যে ১টি বেদেনা ও ৩টি মাদ্রাজি ও বোম্বে লিচু। এ ৪টি গাছের লিচু তার পরিবারের খাওয়া ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া এবং বিক্রি করা যায়।
বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচু বাগানের মালিক মোস্তাকিম জানান, এবারে যে পরিমাণ ফুল আসতে শুরু করেছে তাতে করে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার লিচুর ফলন হবে। তার দেড় একর জমিতে চায়না থ্রি লিচু বাগান রয়েছে। তার বাগানে ১৫২টি গাছ রয়েছে। চলতি বছর মুন্সিগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বাগানটি ক্রয় করেছে। বাগানের লিচুর গাছের বয়স ১৪ বছর চলছে। তার এলাকায় আরো ২০টি বাগানে বাম্পার লিচু ফলন হয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাফয়েত হোসেন জানান, লিচু চাষে ব্যঘাত না ঘটার জন্য কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে। কোন সময়ে কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিৎ তা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।