আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

সরকারের চাপ মোকাবেলায় বিএনপির নতুন কৌশল

রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৫, দুপুর ১২:১৫

এছাড়া আগামী জানুয়ারিতে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানেরও চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের। আর এসব কর্মসূচি সফল করতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে এসব কৌশল সম্পর্কে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছানোর চূড়ান্ত সময়টিকে টার্গেট করে দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। বিএনপির গোছানোর কার্যক্রমে বাধা দিতেই সরকারের এ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দলটি  অভিযোগ করে এসেছে। তবে, দৃশ্যত দলীয় ব্যানারে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করার সিদ্ধান্তকে দূরভিসন্ধিমূলক বলা হলেও কার্যত নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে দলটির নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনে অংশ নেওয়াকেই ইতিবাচক মনে করছেন।

শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, বিএনপি বরাবরের মতো নির্বাচনমুখী দল। দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও যাবে। ইতোমধ্যে নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এতে  দুটি লাভ হবে বিএনপির। একটি হচ্ছে, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যে দলীয় ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল, তা আবারও প্রমাণিত হবে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন দলীয় ব্যানারে  হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই সুবিধা পাবেন বেশি। এক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফলেও নির্বাচন কমিশন সরকার-প্রভাবিত রায় দেবে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এতে আবার দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগের বা যে কারও অধীনে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। আগামী বছর নাগাদ নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত সম্ভাব্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ যুক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে এই নেতার আশাবাদ।

বিএনপিতে প্রভাবশালী এই নেতা আরও জানান, স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ হচ্ছে, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা। এতে বাড়বে পরস্পরের সাক্ষাৎ। স্থানীয় পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়া রাজনৈতিককর্মীরা আবারও নিজেদের ঝালিয়ে নিতে বাড়তি সুবিধা পাবে। তবে এই নেতা একই সঙ্গে আশঙ্কা করেন, ইতোমধ্যে দেওয়া মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীও তৎপর হয়ে উঠবে। তবু নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাই হবে বিএনপির কৌশল—এমনটি জানিয়েছেন বিএনপির ওই গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সরকারি উদ্দেশ্য সফল হবে না।

উদ্ধৃত হতে অনিচ্ছুক এক উপদেষ্টা বলেন, অনেকটা সিদ্ধান্ত হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ম্যাডাম দেশে ফেরার পর।

বিএনপির বিভাগীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত বলেন, যেকোনও নির্বাচনই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে আগ্রহের বিষয়। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন তো আরও অনেক বেশি আগ্রহের। তবে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকায় এখনও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে দল গোছানো যে কার্যক্রম ক্রিয়াশীল আছে, স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এটি আরও কার্যকর হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের ৩২৪টি পৌরসভার মধ্যে ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছর মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ৪ হাজার ৫৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।

চলমান দল গোছানোর কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। এরই মধ্যে আগামী বছরের জানুয়ারির যেকোনও দিন কাউন্সিল করার ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। তারা বলছেন, ঘরোয়া হোক বা বড় করে আয়োজন করে হোক, জানুয়ারিতেই কাউন্সিল হবে। তারই আলোকে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই তো কাউন্সিল করার কথা ছিল। হতে পারে জানুয়ারিতেও যেতে পারে পিছিয়ে। হয়তো কমিটি গঠন শেষ হতে হতে এ বছর লেগে যাবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, কাউন্সিলের দিনক্ষণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

এর আগে গত ৯ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর এক চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করতে নির্দেশনা দিয়েছিল। দল গোছানোর কার্যক্রমের সমন্বয়ক যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ শাজাহান জানিয়েছিলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কমিটি গঠন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এরপর   কেন্দ্র থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বিএনপির দফতরের সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত কমিটি গঠন করা হয়নি।

জানা যায়, কাউন্সিল অনুষ্ঠানে সরকারের বাধা বেশি থাকলে সরাসরি কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। এ আশঙ্কা থেকেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে মহাসচিব করা হবে মির্জা ফখরুল ইসলাম ‌‌‌আলমগীরকে। ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে থেকেই এ সিদ্ধান্ত দলটির শীর্ষমহলে জানিয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে বিএনপির একাধিক বিবৃতি ও মোবাইল মেসেজে মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও পৃথক একটি বিবৃতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত বলে সংশোধন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে চেয়ারপারসনের দুজন উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন, মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই ঘোষণা আসবে।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, এমনটিই তো সিদ্ধান্ত ছিল, এটিই জানতাম। কীভাবে ঘোষণা আসবে, কে দেবেন, এগুলো হয়তো ম্যাডাম সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি দেশে ফিরে আসলেই জানা যাবে।

তবে আরেকটি সূত্র দাবি করেছে, কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে কাউন্সিলেই ঘোষণা দেওয়া হবে।

স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, মির্জা ফখরুলের বর্তমান দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানেন। এর বেশি তিনি জানেন না।

জানা যায়, নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী দিনের আন্দোলনের প্রশ্নে কয়েকটি বিষয়কে সামনে রাখছে বিএনপি। নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের মনোভাব, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান এবং সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই আন্দোলনে যাবে দলটি। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দল গোছানো এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা। ঐক্যবদ্ধ করা।

জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান খান দুদু বলেন, যেকোনও গণতান্ত্রিক দলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচনমুখিতা। বিএনপিও একটি নির্বাচনমুখী দল। গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে সব সময় আন্দোলন ও সংগঠন পাশাপাশি চলে। বিএনপির ক্ষেত্রে ভিন্নতা হবে না।

এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে বলেছিলেন, বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই আছে। আন্দোলন চলবে। গতকাল (শুক্রবার) এক ঘরোয়া আলোচনায়ও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

শামসুজ্জামান খান দুদু মনে করেন, আমাদের দেশে আন্দোলন মানে মনে করা হয় হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি। ফলে, পরবর্তী সময়ে এসব কর্মসূচি আসবে কি না, কখন আসবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

উল্লেখ্য, এ বিষয়ে বিএনপির আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ফোন করা হলে সাড়া মেলেনি।

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন


 

Link copied