গতকাল বুধবার রংপুরের আমলি আদালতে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় হীরা।
নাম প্রকাশে একটি সূত্র জানিয়েছে জবানবন্দিতে হীরা বলেছেন, ‘সোহেল ভাই কামালকে বলেছেন, ঢাকার মতো রংপুরে একজন বিদেশীর লাশ ফেলতে হবে।’
জবানবন্দিতে ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নামও এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জবানবন্দি শেষে রাত ৮টায় তাকে রংপুর কারাগারে পাঠানো হয়। কামাল হীরার বড় ভাই। কুনিও খুনের পর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে আসামিদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলেও এটি যে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত। ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। মামলার প্রাথমিক তদন্তে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দলের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বুধবার একথা বলেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এটি একটি ক্লুবিহীন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাই এই কত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও ভাড়াটে খুনিদের খুঁজে বের করতে সময়ের প্রয়োজন। একই সঙ্গে পুলিশের হাতে রিমান্ডে থাকা হুমায়ুন কবীর হীরার শ্যালকের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন নিয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। হীরার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড বুধবার শেষ হয়েছে।
জেলা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো বলেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর হুমায়ুনকে কাউনিয়া আমলি আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি হাকিম শফিউল আলমের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে হুমায়ুন তাঁর ভাই কামালের সঙ্গে বিএনপির নেতা হাবিব-উন নবীর যোগাযোগের কথা বলেছেন। তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ও হুমায়ুন বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন বলে স্বীকার করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা যিনি ওই তদন্ত দলের সদস্য তিনি জানান, তারা হুমায়ুন কবীর হীরার শ্যালকের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের খোঁজ পেয়েছেন। ওই অর্থের উৎসের সন্ধান করছেন তারা। তার শ্যালক এখনও পলাতক আছেন। তিনি রাজশাহীতে ব্রাক ব্যাংকের একটি শাখায় কর্মরত। বুধবার হীরার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষ হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের গঠিত তদন্ত দলের প্রধান ও পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হুমায়ুন কবির গতকাল বলেন, কোনো ব্যবসায়িক বিরোধে এই খুন হয়নি, এটা নিশ্চিত। খুব ঠান্ডা মাথায় হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে গুলির অগ্রভাগের একটি অংশ ছাড়া দৃশ্যমান আলামত তেমন পাওয়া যায়নি। গুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদন এখনো হাতে আসেনি।
তিনি বলেন, এখনও মামলার তদন্ত নিয়ে মিডিয়ার কাছে বলার মতো সময় আসেনি। এ ছাড়া তদন্ত নিয়ে আগাম কথাবর্তা বললে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যায়। মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হলে নিশ্চয় তা মিডিয়াকে জানানো হবে।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক