রেলসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলে ২৭৮টি রেল ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) রয়েছে। এগুলোর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৯৪টি চালু ছিল। এর মধ্যে ১১৬টি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে। তারপরও সেগুলো বছরের পর বছর ধরে ভারি মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখা হয়েছে।
সূত্রমতে, প্রায় ২২ হাজার যন্ত্রাংশে তৈরি রেল ইঞ্জিনের প্রতিটি যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে ভারি মেরামতের করা হয়। এ সময় ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো মেরামত করে বা সরিয়ে ফেলে নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়। এভাবে প্রতি ছয় বছর পর পর প্রতিটি ডিজেল ইঞ্জিন ভারি মেরামতের জন্য এ কারখানায় পাঠানো হয়।
সুত্রমতে, বর্তমান বাজার দরে এক একটি রেল ইঞ্জিন (মিটারগেজ) কিনতে ২৮ কোটি থেকে ৩২ কোটি (ব্রডগেজ) টাকার প্রয়োজন হয়। অথচ মাত্র ৩০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা খরচ করে কেলোকায় ভারি মেরামতের মাধ্যমে পুরনো একটি রেল ইঞ্জিনকে নতুনের মতো কর্মক্ষম করা হয়।
১৬৫০, ২০০০, ২২০০ ও ২৬০০ অশ্বশক্তির এসব ইঞ্জিন ভারত, কোরিয়া, জার্মান, কানাডা, আমেরিকা ও জাপান থেকে আমদানি করা। তাই এগুলোর ভারি মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ৯৫ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
কেলোকার প্রধান নির্বাহীর চাহিদাপত্র অনুযায়ী চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর আন্তর্জাতিক টেন্ডারে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মাধ্যমে তা কেনার পর কেলোকায় সরবরাহ করে।
কেলোকার প্রধান নির্বাহী হাসান মনসুর জানান, রেল ইঞ্জিন মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ৬০ শতাংশ কেলোকার স্টোরে মজুদ রয়েছে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ যেমন-পিস্টন, রিং, মেইন বিয়ারিং, স্টার্টিং মোটর, ট্রাকশন মোটর ও যন্ত্রাংশ, কম্প্রেসারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রায় দুই বছর যাবত কোনো সরবরাহ নেই। ফলে বর্তমানে কোনো ইঞ্জিন শতভাগ ক্রটিমুক্তভাবে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত অর্থবছরে (২০১১-২০১২) কেলোকায় ২৫টি রেল ইঞ্জিনের ভারি মেরামতের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মেরামত করা হয়েছে ২৭টি। কেলোকা প্রতিষ্ঠার পর কোনো অর্থবছরে ইঞ্জিন মেরামতের এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। অথচ চলতি অর্থবছরে ৩০টি ইঞ্জিনের ভারি মেরামতের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা থেকে ইঞ্জিন বের হয়েছে মাত্র ১১টি। জুনের মধ্যে আরও ১০টি ইঞ্জিন বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।
প্রধান নির্বাহী আরও জানান, চলতি অর্থবছরে ইঞ্জিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ১৩ কোটি ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু যন্ত্রাংশ সংকটের কারণে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ছয় কোটি ১৮ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) ঈসা-ই-খলিলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া তিনি কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
রেলের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (আরএস-রোলিং স্টক) খলিলুর রহমান জানান, বিষয়টি মহাপরিচালকসহ (ডিজি) সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা জানেন। কিন্তু যন্ত্রাংশ কেনায় টেন্ডার আহ্বান, বাছাই, প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানসহ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নানা সমস্যার কারণে সময় ও চাহিদা মতো যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যন্ত্রাংশ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, ডিজেল চালিত রেল ইঞ্জিনের ভারি মেরামত করে কর্মক্ষম করার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে সৌদি আরবের অর্থায়নে দুইশ’ তিন কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ১১১ একর জমির উপর বাংলাদেশ রেলওয়ের “কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা” (কেলোকা) স্থাপন করা হয়। এটিই দেশের রেলইঞ্জিনের ভারি মেরামতের একমাত্র কারখানা।