সংসারে নিত্য অভাব-অনটন লেগেই আছে। নেই আর দশটা মানুষের মতো শারীরিক স্বাভাবিকতা। তবুও এসব প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি ঠাকুরগাঁওয়ের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মেয়ে সূর্যমণি হেমরমের সফলতা।
সূর্যমণি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার একটি হাত নেই, অন্যটি অস্বাভাবিক। হাতের কনুইতে ঝুলে আছে তিনটি আংগুল। এই তিন আংগুল দিয়েই লিখে এবার জিপিএ-৩.০০ পেয়ে এসএসসি পাশ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সূর্যমণি।
সে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও সে ভালো ফল করেছিল। এর আগে পঞ্চম শ্রেণীতেও ভালো ফল করে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে সে।
সূর্যমনি বাবা রাপি হেমরমের নিজস্ব কোনো জমি-জমা নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সদর উপজেলার নারগুন গ্রামে অন্যের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করেন। অন্যের জমিতে মজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও মেয়ের এমন সাফল্যে বাবা-মা গর্বিত। কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের মনে শঙ্কাও অনেক। অভাবের সংসারে কিভাবে এরপর মেয়েকে কলেজে পড়াবেন এই চিন্তায় অস্থির তারা।
এ প্রসঙ্গ আসতেই সূর্যমনির বাবা-মা চোখের পানি মুছতে মুছতে এই প্রতিবেদককে জানান, পাশ করলেও এবার কি হবে। সামনে কিভাবে মেয়েকে পড়াবেন।
সূর্যমণি জানায়, অভাব-অনটনের মধ্যেও খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখা করেছে সে। লেখাপড়া শেষ করে সে শিক্ষক হতে চায়।
নারগুন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বনি আমিন জানান, সূর্যমণি মেধাবী ছাত্রী। সহযোগিতা পেলে এইচএসসিতেও ভালো ফলাফল করবে সে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মেয়েটির ভবিষ্যতে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সমাজের সহৃদয়বানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।