সাইফূর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম: বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে ডুবে নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর দুই ভাইবোনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
রোববার দুপুর একটার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর কাশিয়াবাড়ী সীমান্তের জিরো লাইনের দিগলা কুরা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নদীর দু’ধারে বিজিবি বিএসএফের টহল জোরদার করা হয়।
তবে কবে ভারতীয় প্রশাসনের হাত থেকে ভাইবোনের মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে ,তার কোন হদিস পায়নি শোকাহত পরিবার।
বিজিবি জানিয়েছে দুই ভাইবোনের মরদেহ এক সপ্তাহ মর্গে রাখা হবে । এর মধ্যে মৃত শিশুদের কাগজপত্র ও ছবি বিএসএফের কাছে দেয়া হলে তাদের মৃতদেহ আনার জন্য পরবর্তী আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মৃত ওই দুই ভাইবোন হলো পারভীন খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাছান। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতী গ্রামে। তাদের বাবার নাম রহিম উদ্দিন। মায়ের নাম ছামিনা বেগম।
জানা যায়, গত শুক্রবার ভারতের দিল্লী থেকে পারভীন খাতুন ও শাকিবুল হাছান তাদের বাবা মায়ের সাথে কোরবানি ঈদ উদযাপন করার জন্য দালালদের মাধ্যমে চোরা পথে বাংলাদেশে ফিরছিল। এ সময় ভারতীয় দালালরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরকে সীমান্তে নিয়ে এসে গোপনে এক বাড়িতে রাখে । ওই দিন মধ্য রাতে ৯৪৩ নং মেইন পিলারের পাশে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে তাদের পার করার চেষ্টা করে দালাল চক্র। সেজন্য সবাইকে কাঁটাতার পার করে নদী পথে নিয়ে আসা হয়। এ সময় হঠাৎ করে ভারতের শেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর তাদের ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তড়িঘড়ি করে তাদেরকে নদী পার হওয়ার জন্য বললে দুই শিশুর বাবা রহিম উদ্দিন মালপত্র নিয়ে নদীর মাঝ পথে যান। দুই ভাইবোন তাদের মা ছামিনার কাছে ছিলেন । কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানতো না। এই সময় নদীর স্রোতের টানে রাতের অন্ধকারে মায়ের হাত থেকে ছুটে দুই ভাইবোন নিখোঁজ হয়। পরে পানিতে ডুবে বাবা-মা তারেকে অনেক খোঁজাখুজি করেন । কিন্তু তাদের সন্ধান পাননি।
এদিকে, বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে ডুবে যাওয়া ভাই বোনের লাশ রোববার সকালে নদীর পানিতে ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা বিজিবিকে খবর দেয় । নদীটি ভারতের ভুখন্ড হওয়ায় বিজিবি বিষয়টি বিএসএফকে জানায়। এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিজিবি -বিএসএফের পাহাড়ায় এক ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার পুলিশ মৃতদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ওই সীমান্তের নদীর তীরে বসবাসকারী ইসাহাগ আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, সকাল বেলা পাশাপাশি দুইটি লাশ ভাসতে দেখেন । খবর পেয়ে শতশত লোক মৃতদের দেখার জন্য নদীর পাড়ে জড়ো হয়। পরে বিজিবি এসে তাদেরেকে ঘটনাস্থলে না যাওয়ার বলেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা শুকাতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেছের জানান, মৃত শিশুদের বাবার বাড়ি তার এলাকায়। লাশ ভারত থেকে ফেরত আনার জন্য কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পে এসেছেন। তারা জানিয়েছে, মৃতদের ও তাদের বাবা মায়ের কাগজপত্র লাগবে।
এ প্রসঙ্গে লালমনিহাট ১৫বিজিবি’র অধীনে কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, নদীতে লাশ দুটি ভাসতে দেখে বিএসএফকে জানানো হয়। এজন্য উভয় দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভারতের ১৯২ বিএসএফের শেউটি -এক ক্যাম্পের বিএসএফের ইন্সপেক্টোর এস এইচ শংকর কুমারসহ ৬সদস্য দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।
কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন আরও জানান, বিএসএফ জানিয়েছে, মর্গে শিশুদের লাশ এক সপ্তাহ থাকবে । এর মধ্যে বাংলাদেশি কাগজপত্র পাওয়া গেলে বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় আনা হবে।