খায়রুল ইসলাম, গাইবান্ধা থেকে: বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ব্যাপক অনিয়ম’ খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে ইসি গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এতে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ তিনদিনে ৬৮৫ জনকে শুনানির আওতায় আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার শেষদিনে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের বন্ধ হওয়া উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়া পাঁচ প্রার্থীর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহ¯পতিবার সকাল ৯টা থেকে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে এই শুনানি শুরু করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্যসচিব ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। সেখানে প্রত্যেক প্রার্থী তাদের লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।
শুনানিতে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন জানান, তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে যে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি ৯৪ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে সেগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ভোট বর্জন করা চার প্রার্থী জাতীয় পার্টি সমর্থিত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু (লাঙ্গল প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল প্রতীক), বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান (ট্রাক প্রতীক) জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা লিখিত বক্তব্য পেশ করেছেন। তদনমশ সাপেক্ষে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা তা মেনে নিতে রাজি আছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১১টি ভোট কেন্দ্রের ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জনের শুনানি করা হয়।
পরদিন বুধবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে ৫২২ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের শুনানি স¤পন্ন করা হয়। এরমধ্যে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। গত দুইদিনে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ৬৫৮ জনের শুনানি স¤পন্ন করে তদন্ত কমিটি।
গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন নির্বাচন কমিশন। সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভোট বন্ধ ঘোষণা করেন ইসি। পরে ওই উপ-নির্বাচনের ভোট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে মঙ্গলবার থেকে বৃহ¯পতিবার পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই শুনানির জন্য আদেশ জারি করে ইসি।
গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি ¯িপকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে এই উপ-নির্বাচনের শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন কমিশন তার বিশেষ ক্ষমতাবলে আরও ৯০ দিনের সময় বাড়িয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন স¤পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।