শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে হত্যা চেষ্টা চাঞ্চল্যকর মামলার রায়ে পৃথকভাবে দু'টি ধারায় আসামি রবিউল'কে ১৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সেইসাথে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৯ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে আদালত ঘোষণা দিয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আদালতের পিপি এডভোকেট মো. রবিউল ইসলাম এবং আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান।
দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালত- ৩ এর বিচারক বেগম সাদিয়া সুলতানা আজ মঙ্গলবার সকালে এই রায় প্রদান করেন।
পাবলিক পসিকিউটর- পিপি এডভোকেট মো.রবিউল ইসলাম জানান, হত্যা চেষ্টা দ.বি. ৩০৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদণ্ড এবং আঘাত করা দ. বি. ৩২৫ ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের আরো কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট আব্দুস সামাদ-এক এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন,পিপি এডভোকেট রবিউল ইসলাম এবং এপিপি রঞ্জিত কুমার।
প্রসঙ্গত: সরকারী ডাক বাংলোয় ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হুত্যার প্রচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্ত। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের অবস্থার অবনতি হলে হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকার জাতীয় নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে হস্থান্তর করে। এ ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনও ওয়াহিদার ভাই শেখ ফরিদ ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনা সেময় টক অব দ্যা কান্ট্রিতে রূপ নেয়। এই স্পর্শকাতর ঘটনার পর সারাদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিরাপত্তার জন্যে কার্যালয় ও বাসভবনে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।
ওই মামলায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেন। এনিয়ে চলে বেশ নাটকীয় ঘটনা।
১১ সেপ্টেম্বর রাতে বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে ও ঘোড়াঘাটের ইউএনওর বাসভবনের চাকুরিচ্যুত কর্মচারী রবিউল ইসলামকে আটক করা হয়।
এরপর ২০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আমলি আদালত-৭-এর বিচারক ইসমাইল হোসেনের কাছে হামলার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন রবিউল। পরদিন দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
আদালতের পাবলিক পসিকিউটর- পিপি এডভোকেট মো.রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, দিনাজপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথম থেকে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত করা হয়েছে। পরে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।
এ মামলায় ৫৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নেয়া হয়।