মমিনুল ইসলাম রিপন: নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রংপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ মে) বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে এ গণসমাবেশের আয়োজন করে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। সকাল থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড হাতে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধাসহ ৮ জেলা থেকে মানুষ পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে আসতে শুরু করে। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠক ও তিস্তা পাড়ের মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল।
সমাবেশে উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় ও সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধান, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা।
গণসমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির বসবাস রংপুর বিভাগে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের চেয়ে কম বরাদ্দ রংপুর বিভাগের জন্য দেওয়া হয়েছে। দেশে তিন লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প চললেও রংপুর বিভাগের জন্য কোন মেগাপ্রকল্প নেই। তিস্তা সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ প্রতি বছর বর্ষায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গন ও বন্যায় যে পরিমান ক্ষতি হয়, তার পরিমান নিঃসন্দেহে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার চেয়ে অনেক গুন বেশি। রংপুরের সাথে সারাদেশের বৈষম্য কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর সুরক্ষায় কোন বিকল্প নেই। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী পহেলা জুন রংপুর বিভাগের সব জেলায় ৫ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া চলতি মে মাসে নদীপাড়ের সর্বত্রই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিছিলসহ আলোচনা সভা করার কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় গণসমাবেশ থেকে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, আমি ১৪ দলের একজন সদস্য হিসেবে তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আন্দোলনের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করছি। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের ৬ দফা দাবী বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। দেশের ৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজাটের মধ্যে ৮ হাজার কোটি টাকা কোন কিছুই নাই। প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করেছেন, এখন টাকা চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের। আমাদের এক দাবী টাকা দেন, টাকা দেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ২০১৫ সালে এই পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে তিস্তা কনভেনশনে এসেছিলাম। তখন থেকে আজ অবধি তিস্তা পানি চুক্তি ও মহাপরিকল্পনার আন্দোলন চলে আসছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে সরকারের কেউ কথা বলে না। বর্তমানে যারা তিস্তা আন্দোলনকে ভারত বিরোধী বলছেন তাদের বলতে চাই, চীন করবে না ভারত করবে এ খেলা বন্ধ করেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কোন কথা মানা হবে না। আগামী বাজেটে এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ করতেই হবে। অন্যত্থায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।