শাজ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকেঃ দিনাজপুরে দুই উপজেলাবাসী’র ভাগ্য বদলে দিয়েছে পূণর্ভবা নদীর উপর নির্মিত গৌরিপুর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট এবং সেতু। সদর ও বিরল উপজেলার প্রায় ৩৬’শ হেক্টর জমিকে চাষের আওতায় এনে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, অসংখ্য পরিবারের সুপিয় পানি সংকট দূর এবং আর্সেনিকের আবির্ভাব প্রতিহত করা ছাড়াও মৎস্য চাষের অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। সেইসাথে দু’টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে ঘটেছে,আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
দিনাজপুর জেলা সদরের গৌরীপুর নামক স্থানে পূণর্ভবা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে,সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রকল্প। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে নির্মিত এ প্রকল্পে চার ভেল্ট রেগুলেটর বা ৬ মিটার থেকে ৬ দশমিক ৫০ মিটারের স্লুইস গেট,৯২ মিটার ইউয়্যার ও ৫০০ মিটার সংযোগ সড়ক।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার প্রায় ৩৬’শ হেক্টর জমিকে চাষের আওতায় এনে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি লেবেলের উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প সংলগ্ন হাজার হাজার পরিবারের সুপিয় পানি সংকট দূর করার পাশাপাশি আর্সেনিকের আবির্ভাব প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। দু’টি উপজেলার নদী ও শাখা খালে দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ বৃদ্ধি করা পেয়েছে। এলাকার মোবারক হোসেন জানালেন, সেচের অভাবে তার অধিকাংশ জমি পতিত-অনাবাদী থাকতো। এখন তিনি এই প্রকল্পের পানি দিয়ে সেচ সুবিধা পাচ্ছে। জমি আবাদ করে ফিরছে,তার ভাগ্যেও পরিবর্তন।
দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গৌরিপুর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট এবং সেতু বাস্তবায়নের ফলে সদর এবং বিরল উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি ঘটেছে,আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলে জানিয়েছেন,স্থানীয় ৯ নং আস্করপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া। প্রায় ১৭ কিলো মিটার দূরত্ব কমেছে শহরের। এমনটাই মন্তব্য করেছেন,স্থানীয় চেয়ারম্যান জিয়।
গৌরিপুরস্থ পূণর্ভবা নদীর উপর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট এবং সেতু’টি নির্মিত হওয়ায় প্রতিদিন বিকেলে সেখানে বসছে,ভ্রাম্যমান মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে সমাগম ঘটছে,অসংখ্য দর্শনার্থী। এতে এলাকায় দোকান-পাট,স্থানীয় হাট-বাজার গড়ে উঠেছে। এলাকার অনেকের সৃষ্টি হয়েছে,আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। এমনটাই জানালেন,স্থানীয় ভাসমান দোকানদার রমজান আলী ও মালেকা খাতুন সহ অনেকেই।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড,দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল ইসলাম জানালেন,বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও তত্ববধানে ২০১৬ অক্টোবর থেকে ২০২১ জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করেছে,বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী পরিচালিত নারায়নগঞ্জ ডক ইয়ার্ড লিমিটেড।
‘ভূ-গর্ভস্থ পানির আধার আর ভূপরিস্থ পানিতেই বাঁচবে বাংলাদেশ।’ এই লক্ষকে সামনে রেখে নির্মিত হয়েছে, এই গৌরিপুর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট এবং সেতু। এমনটাই জানালেন এই প্রকৌশলী।
এই গৌরিপুর স্লুইস গেটটি নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন দু’উপজেলাবাসী’র সেতু বন্ধন ঘটেছে।তেমনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দু’উপজেলাবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে, এই স্লুইস গেটটি’র কারণে।