শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকে: দিনাজপুরে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট আনিকা তাসনিম সরকার ধরা খেয়েছে। এবার ধরা খেল দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। ভুয়া বিভিন্ন কাগজ- পত্র,পাসপোর্ট, আইডি কার্ড,ড্রাইভিং লাইসেন্স,সিম এবং সহযোগি প্রতারক ৩য় স্বামী মান্না সহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এনিয়ে আজ সোমবার ( ২৩ জানুয়ারি) বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করেছেন,দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট আনিকা তাসনিম সরকারের ভয়াবহ প্রতারণার কথা। যা সিনেমা-নাটকেও হার মানায়।
শনিবার গভীর রাতে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী থেকে তাদের গ্রেফতার করলেও তথ্য উদঘাটনের জন্যে আজ সোমবার পুলিশ সাংবাদিকদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করে।
পুলিশ জানায়,অতি ধুরন্ধর এই প্রতারক আনিকার বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায়। আনিকা তাসনিম সরকার (অনামিকা) ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শাহাজাহান আলী সরকার পুতুর তৃতীয় মেয়ে। তার সাথে গ্রেফতার আরেক প্রতারক আব্দুল মান্নান ওরফে মান্না আনিকার ৩য় স্বামী। মান্না নাটোর জেলা সদরের জলালাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়ার ছেলে। আনিকা দীর্ঘদিন
নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আসছিলো।এটাকে বিশ্বাসে আনতে তিনি ৩৮ তম বিসিএস ক্যাডারের গ্রেজেটে ১০৫ নং সিরিয়ালে তাঁর নাম পেস্ট করেছেন।
বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন তিনি।
তিনি সম্প্রতি দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাম ব্যবহার ও জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন দু'টি সংবাদপত্র মাধ্যমে। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন।
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখা ও জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকীর স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন পদে ৫০ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই নজরে আসে জেলা প্রশাসকের। এর পরই জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে ১৭ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
'সতর্কীকরণ বার্তা' শিরোনামে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত ওই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরের আইডিতেও ওই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জনসাধারণকে সতর্ক করে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি সবার নজরে আসতেই দিনাজপুরে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে পত্রিকায় এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী জানান, এ ঘটনায় যাতে করে কেউ বিভ্রান্ত না হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুলিশ সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সাংবাদিককে বাদি করে এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করে।
মামলা দায়ের পর থেকে আনিকা ঢাকা,নাটোর,ঝিনাইদহ বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপন করে থাকে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার গভীর রাতে পুলিশ তাদের শহরের বালুবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে।
এর আগে ২০২১'সালে ৫ আগষ্টআনিকাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলেন ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়ায়।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরএলাকা মধ্য গৌরীপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে থেকে আনিকা তাসনিম সরকার (অনামিকা) নামের এই ভুয়া নারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে আটক করেছে রংপুর পিবিআই।