শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকে:দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালীরমেলায় অবাধে চলছে, যাত্রা পালার নামে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও অবৈধ লটারি। এতে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। নৈতিক অধঃ:পতনে ধাবিত হচ্ছে,যুব সমাজ।বৃদ্ধি পেয়েছে,চুরি,ডাকাতি সহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা। কিন্তু,স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে পালন করছে,নীরবতা ভূমিকা।
১৪৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালী মেলা অশ্লীলতা এবং বিতর্কিত আয়োজন বন্ধ ছিলো প্রায় ৭ বছর। গ্রামীণ ঐতিহ্য মেলার নামে এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি ও তৎপরতা। এতে ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।
শনিবার গভীর রাতে মেলায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোলা মাঠে বসেছে হরেক রকম দোকান। দোকানগুলোর টিন দিয়ে ঘিরে গোপন স্থান তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কোথাও বসেছে জুয়ার আসর। অন্যদিকে চৈতুলীর অপেরা, লায়ন অপেরা,চৈতালী অপেরা ও ডায়মন অপেরায় যাত্রার নামে চলছে গানের তালেতালে অশ্লীল নৃত্য। আবার প্রতিদিনেই চলছে অবৈধ দৈনিক বধূয়া র্যাফল ড্র। সেখানকার অধিকাংশ দর্শকই যুবক ও স্কুল শিক্ষার্থী। এদিকে কালীমেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বন্ধ করে মোটরসাইকেল গ্যারেজ গড়ে ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,মোটা অংকের টাকা নিয়ে এ মাঠ ভাড়া দিয়েছেন স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকগণ।
উপজেলার সচেতন নাগরিক ও এলাকাবাসী জানান, ঢেমঢেমিয়া কালীরমেলা সর্বাধিক প্রশংসিত, প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ২৪ অক্টোবর ২০২২ শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা উপলক্ষে এ মেলা উদ্বোধন করেন, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। উদ্বোধনের আগে প্রতিবছর ঘোড়া ও গরু-মহিষের বিরাট হাট বসে। কিন্তু ৬-৭ বছর আগে অশ্লীল নৃত্য সহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনার কারণে যাত্রা, পুতুল নাচ ও অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
২৭ অক্টোবর মেলার অনুমতি পেয়েছেন আয়োজক কমিটি। মেলার নাম করে প্রতিদিন র্যাফল ড্র, অশ্লীল নৃত্য, জুয়াসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। যা আইন বিরোধী ও মেনে নেওয়ার মতো নয়। এমনটাই দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
অভিভাবকদের অভিযোগ,মেলার আশপাশের কয়েকটি গ্রামের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। মেলার অশ্লীল নাচ-গানের দিকে ঝুঁকছে হাজার হাজার কিশোর, যুবক ও শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে মানুষ আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে যুব-সমাজ। ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী। এতে এলাকায় বাড়বে অপরাধ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম চলতে পারে না। সমাজ ও দেশের স্বার্থে এসব অসামাজিক কর্ম বন্ধ হওয়া দরকার। কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থে পুরো সমাজটা নষ্ট ও এমন অবৈধ কার্যকলাপ চলতে পারে না। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা কাম্য নয়। প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে এগুলো দেখা উচিত। ফলে অবিলম্বে মেলায় এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য তারা অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাকারিয়া জাকার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, মেলার কারণে বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রতিনিয়ত গরু চুরি সহ বিভিন্ন চুরি বেড়েই চলছে যা কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আলোচনা সভায় সাধারণ মানুষ ও বক্তাগণের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।
ধর্মীয় মেলায় এসব অশ্লীল ও অপরাধ কার্যকলাপ বন্ধের দাবী জানিয়েছে,এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ। বিষয়টি প্রশাসনের উবধর্তন কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে,এমনটাই প্রত্যাশা সবার।