মমিনুল ইসলাম রিপন: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে, সমঝোতা করে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীসহ অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি করা। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী। একটি নির্বাচনে অনেক অর্থ ও শক্তি ব্যয় হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে গোপন কক্ষে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন করবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন কাজ করছে। আমরা প্রার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের নানা সমস্যা শুনেছি এবং বিধি অনুযায়ী সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে না। যদি তিনি কোন দলকে সমর্থক হন, সেটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়।
ইভিএমে সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম নিয়ে অনেক প্রার্থীর শংঙ্কা ছিল। আজ আমরা তাদের সাথে কথা বলে সেই শংঙ্কা দুরে করেছি। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সহজ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হয়। যেটি ব্যালটে করলে কিছুটা সমস্যা হওয়ার শংঙ্কা থাকবে। তবে ইভিএমে একজনের ভোট জোর করে অন্যজন দিতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারী রয়েছে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি, আগামীতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ইভিএম মেশিন রয়েছে। সেগুলো দিয়েই আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবো। জাতীয় নির্বাচন দেড়শটি কিংবা ৩’শটি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে হবে কি না তা সরকারের সহযোগিতার উপর নির্ভর করছে।
গাইবান্ধা নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত পুরো নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। আমরা প্রায় ১৩০ থেকে ১৪০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সেই সাথে দু’জন পুলিশের কর্মকর্তা, একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওই নির্বাচনে জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনের তেমন গাফিলতি পাওয়া যায়নি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবীব খান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহনাজ পারভীন, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় করবেন।
উল্লেখ্য, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর ইভিএমের মাধ্যমে সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।