স্টাফ রিপোর্টার: পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লি কসবা মাঝিপাড়ায় ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের হামলার ঘটনায় অন্তত দশ গ্রামে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যা হলেই পুরুষশূন্য গ্রামগুলোতে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহিলা, শিশু আর বৃদ্ধ ছাড়া রাতে গ্রামে কোনো পুরুষ থাকে না।
ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রাম রাজারামপুর, খেদমতপুর, মজিদপুর, হাতিবান্ধা, নখারপাড়া, ধুলগাড়ী, গাড়াবেড়, চেরাগপুরসহ ঘটনাস্থলের আশপাশের ১০-১১টি গ্রামের ৩ হাজারের বেশি পুরুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফলে পরিবারগুলোতে রোজগার না থাকায় খাদ্য সংকটসহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েক গ্রামের মহিলারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান।
নাখারপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আঙ্গুরি বেগম বলেন, প্রতিরাতে গ্রামে সাদা পোশাক পরে লোকজন আসে। তারা পুলিশ নাকি অন্য কোনও সংস্থার লোক বোঝার উপায় নেই। কারণ ছাড়াই পুলিশ পরিচয়ে ডাকাডাকি করে, জানতে চাইলে বলে আসামি খুঁজতেছে।
একই গ্রামের হালিম মিয়ার স্ত্রী লাইজু বেগম বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে ঘটনার পরদিন থেকে আমার স্বামী বাড়ি আসে না। অথচ হামলার দিন আমার স্বামী বাড়িতে ছিল না।
জায়গিরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, আমার স্বামী বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। গ্রেফতারের ভয়ে আট দিন ধরে বাড়ি আসে না। অর্থের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে আছি আমরা।
বড় রাজারামপুরের শরিফা বেগম বলেন, রাস্তাত থাকি পুলিশ মোর স্বামীসহ হামার গেরামের ৫ জনোক ধরি জ্যালোত পাটাচে। যখন হেন্দুর বাড়িত আগুন নাগে দেয়, তকন মোর স্বামী বাড়িত আচিলো। পরে আগুন দ্যাকপার গেলে পুলিশ তাকে ঘাটাত (রাস্তা) থাকি গ্রেফতার করে। হামার গেরামোত কোনো পুরুষ মানুষ নাই।
রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামবাসীকে বাড়িতে থাকতে বলেছি। তবে এটা সত্য, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে; তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তি আছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তারা আমাদের বলেছে, তদন্ত করে শুধু দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরী দুলাল বলেন, আমার ইউনিয়নের ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তার মধ্যে সাতজন নিরপরাধ। সোডাপীর বাজারের মুদি দোকানি ওমর আলীকে ঘটনার পরদিন তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে। অথচ ঘটনার দিন তিনি দোকানে ছিলেন।
পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, যারা নিরপরাধী তারা বাড়িতে থাকবেন। আমরা ইতোমধ্যেই হামলাকারীদেরকে শনাক্ত করেছি। ধরেছিও। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অপরাধীদেরকে গ্রেফতার করছি। কাউকে হয়রানি করা হবে না।