মমিনুল ইসলাম রিপন: গরীবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত আহমেদ মাহী বুলবুল শনিবার রাত দশটার দিকে তার মায়ের কাছে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন সন্তানদের খাওয়ার জন্য গাভির দুধ কিনতে। কয়েকদিন পরে এসে দুধ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর হয়নি। রোববার ভোরে ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা যান ডাক্তার বুলবুল। বুলবুলের বাড়ি রংপুর নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের ভগিবালাপাড়া এলাকায়। দুইভাই এক বোনের মধ্যে বুলবুল ছিলেন সবার বড়। বাবা আব্দুস সামাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সেনা বাহিনীতে চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালে তার বাবা মারা যান। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায় হলেও তার বাবা ৪০ আগে রংপুরেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন বুলবুল। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাতেই প্রাকটিস শুরু করেন। মাঝে মধ্যে রংপুরের বাড়িতে আসতেন। বিয়ে করেছেন দিনাজপুরে। সাত বছর বয়সী মেয়ে এবং দেড় বছর বয়সী ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ঢাকার শেওড়া পাড়ায় থাকেতেন ডা. বুলবুল।
বুলবুলের মা বুলবুলি বেগম বলেন, শনিবার রাতে বিকাশে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দুধ কিনে রাখতে বলেছিল বুলবুল। তার কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাড়িতে এসে সেই দুধ নিয়ে যেত। তার আাগেই মৃত্যুর খবর পেলাম। তিনি সন্তান হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বুলবুলের ছোট ভাই বকুল বলেন, সকালবেলা মোবাইল ফোনে খবর পাই ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের সাথে কারও কোন বিরোধ ছিলনা। তিনদিন আগে আমাকে ফোন করে ভাই বলেন তুই রেডি থাকিস রোববার অথবা সোমবার নোয়াখালি যাব। আমি ভাইয়ের কথামত আজ রোববার ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই ভাইয়ের মৃত্যু খবর এল। তিনি বলেন, ভাইয়ের লাশ রংপুরেই ভগিবালাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে।
১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল গফফার বলেন, বুলবুল খুব ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের লোক ছিল। সকালে খবর পেয়ে বুলবুলদের বাড়িতে গিয়েছি। এত ভাল মানুষকে এভাবে হত্যা করা হবে এটা আমরা মেনে নিতে পারছিনা।
রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বুলবুল খুব ভাল ছাত্র এবং শান্ত স্বাভাবের ছিল। এধরণের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছিনা। তিনি হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।