লাইফস্টাইল ডেস্ক: সচেতনতা বেড়েছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে । তবে অনেকে আবার নিজের বিষণ্নতা লুকিয়ে রাখতে চান। হাসি–আনন্দের সঙ্গে মন খারাপের অনুভূতিগুলোও জীবনের অংশ। তবে বিষণ্নতা দীর্ঘস্থায়ী হলে তার প্রভাব পড়ে কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক, এমনকি শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও। অথচ প্রতিদিন ছোট কিছু অভ্যাসে বদল এনে মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।
১. অন্তত ১০ মিনিট ব্যায়াম করা জরুরি
হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং মন ও শরীর দুটিকেই সক্রিয় করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় ব্যায়াম করতে পারেন। দিনের শুরুতে গায়ে রোদ লাগানো বা হাঁটাহাঁটি করা আমাদের দেহে কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সন্তানকে স্কুল থেকে আনা–নেওয়ার পথে হাঁটতে পারেন, অফিসে যাওয়ার সময় কিছুটা পথ হেঁটে যেতে পারেন, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ির ব্যবহার করতে পারেন।
২. সকালের রোদ লাগান শরীরে
অনেকে দিনের বেশির ভাগ সময় চার দেয়ালের মধে কাটান। এতে মনের ওপর চাপ বাড়ে। ভিটামিন ডির অভাবে হতাশা ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। তাই মন ভালো রাখতে প্রতিদিন সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক মিনিটের জন্য হলেও বাইরে বের হোন। বেরোনোর সময় না থাকলে দিনের বেলায় অন্তত জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। প্রকৃতির আলো–বাতাস মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকালের রোদ শরীদের জন্য খুবই উপকারী, সময় থাকলে সকালে বাইরে হাঁটতে পারেন।
৩. প্রতিদিন একই সময়ে খান
অনেক সময় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে আমরা নানা ধরনের কঠিন পথ বেছে নিই। কিন্তু সহজ কাজও না জানার কারণে এড়িয়ে যাই। এই যেমন—শুধু সঠিক সময়ে খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী ডা. মার্থা ডেইরোস কোলাডো বলেন, প্রতিদিন ডিনারে বাড়িতে রান্না করা খাবার একই সময়ে খেতে চেষ্টা করুন। এ ধারাবাহিকতা মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
৪. প্রকৃতির কাছাকাছি থাকুন
ইট-পাথরের শহরে প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়া কিছুটা কঠিন বটে, তবে চাইলে বাড়ির পাশের কোনো পার্ক বা ছাদবাগানে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। ইংল্যান্ডের ডার্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইলস রিচার্ডসন বলেন, প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখলে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে, মনও ভালো থাকে এবং যে কোনো কাজেও মন বসে।
৫. উদ্বেগ কমানোর ৫ ৪ ৩ ২ ১ কৌশল
সেভেন লায়ন ইয়ার্ড ওয়েলবিয়িং অ্যান্ড হোলিস্টিক হেলথ ক্লিনিকের মনোবিদ শার্লট আকিনিয়েমি অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করলে ‘৫ ৪ ৩ ২ ১ কৌশল’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এই মজার কৌশল হলো—প্রথমে চারপাশে তাকান, এরপর পাঁচটি জিনিসের নাম বলুন, যা আপনি দেখতে পান; চারটি জিনিস যা আপনি স্পর্শ করতে পারেন, তিনটি জিনিস যা আপনি শুনতে পারেন; দুটি জিনিস, আপনি যেটির ঘ্রাণ নিতে পারেন এবং এমন একটি জিনিস, যেটির স্বাদ নিতে পারেন। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে খুবই কার্যকর কৈশল এটি।
৬. ডিজিটাল ডিটক্স করুন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারাক্ষণ সক্রিয় থাকা অনেক সময় আমাদের অজান্তেই মনকে ভারাক্রান্ত করে। সেখানে যেহেতু মানুষ জীবনের ইতিবাচক বিষয়গুলো দেখাতেই বেশি পছন্দ করে, তাই অন্যের জীবনের সাফল্য বা আনন্দ দেখে নিজের জীবনকে ছোট মনে হতে পারে। জন্ম নিতে পারে হীনম্মন্যতা। তাই প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ফোন বা ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন। হাঁটতে যান, প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন বা চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকুন। এটিই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’, যা মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. ছোট সাফল্যগুলো উদ্যাপন করুন
আপনি নিজের জন্য ছোট কিছু লক্ষ্য সেট করুন। এরপর সেগুলোতে সফল হতে চেষ্টা করুন। অন্যের কাছে সেটি সহজ ও স্বাভাবিক মনে হলেও আপনার এই ছোট্ট সাফল্যের জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিন। নিজেকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলবেন না। নিজের ছোট সাফল্যগুলো উদ্যাপন করুন। এতে মন চাপমুক্ত হবে এবং নতুন কাজে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।