ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপচ্যাটকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে পঞ্চগড়ে সোহান আলী (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রকে দলবদ্ধভাবে মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঘটনার সময় স্থানীয়রা ১২ কিশোরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পঞ্চগড় সদর থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে আহত সোহানের বড় ভাই রশিদুল ইসলাম। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সোহান অমরখানা এলাকার বদিনাজোত গ্রামের ভ্যানচালক তরিকুল ইসলামের ছেলে এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। মারধরে সে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রায় ১০-১২ দিন আগে একটি ফেসবুক গ্রুপে সোহানের সঙ্গে অভিযুক্তদের বাকবিতণ্ডা হয়। সোমবার পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন কিশোর তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় নূর নামের এক কিশোর সাইকেলের ফ্রিহুইল দিয়ে সোহানের মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে। আর কাইয়ুম নামের আরেকজন কিশোর ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের দিকে আঘাত করতে গেলে সোহান বাম হাতে ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ সময় তার কবজির রগ কেটে যায়। অন্যরা তখন তাকে কিল-ঘুষি ও লাথিও মারে। ঘটনার সময় সোহানের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে ১২ কিশোরকে ধরে ফেললেও মূল হামলাকারীসহ কয়েকজন পালিয়ে যায়।
একই সময় অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক উত্তেজিত জনতার হাত থেকে আটক ১২ কিশোরকে উদ্ধার করে একটি শ্রেণিকক্ষে রাখেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ পুলিশ এসে তাদের হেফাজতে নেয় এবং হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম জব্দ করে।
আরো জানা গেছে, আটক ১২ কিশোরের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কালেক্টরেট স্কুল, জগদল উচ্চ বিদ্যালয় এবং জগদল আলিম মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সপ্তম–নবম শ্রেণির ছাত্র। তাদের বাড়ি সাতমেড়া ইউনিয়ন, জগদল বাজার, খালপাড়া, প্রধানপাড়া, বানিয়াপাড়া ও চেকরমারী এলাকায়।
আহত সোহানের বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। একই দাবি তুলেন মামলার বাদী বড় ভাই রশিদুল ইসলাম। বলেন তাকে মেরে ফেলতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে আটক কিশোরদের স্বজনেরা দাবি তারা মূল হামলাকারী নন। বন্ধুর সঙ্গে সমস্যা হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক হয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ হিল জামান জানান, আটককৃতদের নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।