আর্কাইভ  সোমবার ● ১৩ মে ২০২৪ ● ৩০ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৩ মে ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীর ডোমার পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী গ্রেপ্তার       নীলফামারীর একটি প্রতিষ্ঠানের দুইজন শিক্ষার্থী পাস করেনি এসএসসিতে        ৪ দশমিক ৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ, জিপিএ ৫ না পাওয়ায় নীলফামারীতে আত্মহত্যা ছাত্রের       রংপুরে কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা মেরাজ গ্রেফতার       দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাশ করেনি চারটি বিদ্যালয়ের কোন  শিক্ষার্থী      

 width=
 

মহা সংকটে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১৬, সকাল ০৯:৫৫

নেই গবেষণাগার, বন্ধ ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক সংকটে সেশনজট, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা আর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিতকরণসহ নানাবিধ অভ্যন্তরীণ কারণে এই সংকটের সৃষ্টি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আট বছর আগে যে সমস্যা চিহ্নিত হয়েছিল আজও এর সমাধান হচ্ছে না। তবে উপাচার্য বলছেন, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে যা যা করার তাই করছেন তিনি।

রংপুর টিচার্চ ট্রেনিং কলেজে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল ১২ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০১১ সালে এসে এর নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, ১৬ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ২১টি বিভাগে আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আছে ১৩১ জন শিক্ষক। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন মাত্র ১০৭ জন। বাকিরা আছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে গুণগত শিক্ষার, পড়ছে সেশনজটে।

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের প্রত্যেকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কমবেশি সেশনজটের জটাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। একেকটি বিভাগে ছয় মাস থেকে আড়াই বছরের সেশনজটের বোঝা নিয়ে চলছে বিভাগগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদসহ কয়েকটি বিভাগে এই সেশনজটের মাত্রা কিছুটা সহনীয় হলেও বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে সেশনজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জট কল্পনাতীত। আড়াই বছরেরও বেশি সেশনজটে রয়েছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক বছর থেকে দুই বছরের অধিক সময় সেশনজটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রসায়ন, পদার্থ, গণিত, বাংলা, ইতিহাস ও প্রত্বতত্ত্ব, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন, ইংরেজি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আর সেশনজট তৈরির পেছনে শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির (ল্যাব) সংকট অন্যতম কারণ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভাগগুলোতে সেশনজটের বড় ধাক্কাটা লাগে ২০১৩ সালের শুরুতে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহম্মদ আব্দুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে ১১জন শিক্ষকের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চের ব্যানারের আন্দোলন কর্মসূচির সূচনার মাধ্যমে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ২০১৩ সালে ওই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় ছয় মাসের সেশনজটের কবলে পড়ে যায়। এমনি করে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতা কেন্দ্রীয়করণসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই আন্দোলনের ফলেও শুরু হয় দ্বিতীয় দফার সেশন জট।

শিক্ষকরা-কর্মকর্তারা জানান, অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে শিক্ষক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি। এতে করে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসে। এছাড়াও ভবনসহ সব কিছুই প্রস্তুত থাকলেও কর্তৃপক্ষ চালু করেনি ক্যাফেটেরিয়া। ফলে এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বিশ্বমানের একটি গবেষণা কেন্দ্র ড. ওয়াজেদ রিসার্স এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে ৩৩ জন শিক্ষার্থী এই কেন্দ্রে ভর্তি আছেন। তারাও পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। আছে, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি আবাসিক হল। এর মধ্যে দুটি ছাত্রদের জন্য আর একটি ছাত্রীদের। জায়গা সংঙ্কুলান না হওয়ায় ওই হল তিনটিতে শিক্ষার্থীরা থাকছেন গাদাগাদি করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণ করা হলেও সেগুলো দুয়ার এখনো খোলা হয়নি, উদ্বোধন করা হয়নি বহু স্থাপনার। কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়হীনতায় ক্রমেই বাড়ছে সংকট। ফলে প্রত্যাশিত মাত্রায় পথ চলতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি, অভিযোগ শিক্ষকদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সংকট উপাচার্যকে কেন্দ্র করে। কেন যেন কর্তাব্যক্তিদের আন্তরিকতার অভাবে ক্রমান্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সমন্বয়হীন হয়ে পড়ছে। সেশনজট বেড়ে চলেছে। শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ সংকটে পঙ্গু হতে বসেছে একটি শিশু বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে ঘিরে। হওয়া উচিত শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রতিফলন কতখানি হয়েছে তা প্রশ্ন ছুড়ে রাখেন সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য সমন্বয় করেন না। মূলত সমন্বয়হীনতার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার লক্ষে পৌঁছতে পারছে না। তাঁর দাবি, সীমাহীন সংকট কাটিয়ে সম্ভাবনার পথে হাঁটবে বিশ্বদ্যিালয়টি, সেটিই প্রত্যাশা সবার।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, ড. একেএম নূর উন নবী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একসাথে কাজ করতে হবে। ক্রমান্বয়ে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, ইতিমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোর জন্য ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী ২য় দফার কাজে একাডেমিক ভবন নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চিন্তা-ভাবনা আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সে ধরনের চিন্তা ভাবনা আছে। সেই গুণগত উৎকর্ষ সাধনে জন্য যা যা করা দরকার আমি সেগুলো ছক আঁকা হচ্ছে। আশা করছি তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

খবর- ঢাকাটাইমস

মন্তব্য করুন


 

Link copied