আর্কাইভ  শনিবার ● ৭ জুন ২০২৫ ● ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ৭ জুন ২০২৫

রাত পোহালেই ত্যাগের উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা

শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, রাত ০৯:৪২

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  আগামীকাল শনিবার দেশজুড়ে উদযাপন করা হবে ত্যাগ ও আনন্দের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। বৃহস্পতিবার মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।

স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কুরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।

তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কুরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।

ইসলামে কুরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ গরু, মহিষ, উট, ভেড়া. ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া যায়।

আগামীকাল সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কুরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনি-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।

এদিকে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সকাল সাড়ে ৭টায় হবে জামাত। এতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন।

এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

তবে প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে সকাল ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে এবারও পাঁচটি জামাত হবে। সকাল ৭টা, সকাল ৮টা, সকাল ৯টা, সকাল ১০টায় এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে এসব জামাত হবে।

প্রতিবছর দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে। সকাল ৯টায় এ জামাতে ইমামতি করবেন জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল খায়ের মো. সাইফুল্লাহ। ঈদের এ জামাতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বরাবরের মতই শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত আয়োজনে কয়েক বছর ধরে শোলাকিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান। আয়োজকদের দাবি, প্রায় ২২ একর আয়তনের এ মাঠে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ সেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।

গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। ইমামতি করবেন মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান।

ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৮টায় দুটি ঈদ জামাত হবে এবার।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৭টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের পূর্ব পাশের খেলার মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে।

এছাড়া ঢাকা মহানগরীর শতাধিক ঈদগাহে এবং দেড় হাজারের বেশি মসজিদে জামাতের আয়োজন থাকবে ঈদের সকালে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সকাল সাড়ে ৭টায় এ জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। সেখানে দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। তাতে ইমামতি করবেন মসজিদটির পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক।

পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে লালদীঘির পাড় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং সাগরিকা এলাকার মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে আরেকটি ঈদ জামাত হবে সকাল ৮টায়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে স্থানীয়রা ঈদের জামাত আয়োজন করবেন। এসবে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।

রাজশাহী

রাজশাহীতে ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায় মহানগরীর হযরত শাহ মখদুম (র.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে বিকল্প হিসেবে সকাল ৮টায় শাহ মখদুম (র.) দরগাহ জামে মসজিদে জামাত হবে। অন্যান্য ঈদগাহে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ও তাদের সময় অনুযায়ী ঈদ জামাত আয়োজন করবে।

খুলনা

খুলনায় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে সার্কিট হাউস মাঠে, সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে একই সময়ে খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে। খুলনা টাউন জামে মসজিদে আরও দুটি ঈদ জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টা এবং সকাল ১০টায়।

খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে ঈদের জামাত হবে সকাল ৭টায়। একই সময়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের জামাত হবে। এছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ও ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক ঈদের জামাত হবে।

খুলনা জেলা ও নগর মিলে এবার সাতশর বেশি মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বরিশাল

বরিশালে কুরবানির ঈদের প্রধান জামাত হবে নগরীর বান্দ রোড হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায়। একই সময়ে নগরীর আমতলা মোড়ে বরিশাল জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ঈদের জামাত হবে। এ ছাড়া চরমোনাই দরবার শরিফে ঈদের জামাত হবে সকাল ৯টায়। এ জামাতে ইমামতি করবেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

জেলার অন্যতম গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে।

বরিশাল নগরীর গীর্জা মহল্লার জামে কসাই, চকবাজারের জামে এবাদুল্লাহ, সদর রোডের বায়তুল মোকারম, পোর্ট রোডের জামে কেরামতিয়া ও আলেকান্দার ইউছুমদ্দিন জামে মসজিদে দুটি করে জামাত হবে। এ সব মসজিদে প্রথম জামাত সকাল ৮টায় ও দ্বিতীয় জামাত ৯টায়।

সিলেট

সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে সকাল ৮টায়। ইমামতি করবেন বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি জুনায়েদ আহমদ। এছাড়া নগরীর বন্দরবাজার এলাকার কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায় এবং সকাল ৯টায় ঈদের তিনটি জামাত হবে।

সিলেটের সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় জামাত হবে। সেখানে ইমামতি করবেন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী।

রংপুর

রংপুরে ঈদের প্রধান জামাত হবে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সকাল ৮টায় এ নামাজে ইমামতি করবেন রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. বায়েজীদ হোসাইন। আবহাওয়া খারাপ হলে সকাল সাড়ে ৮টায় প্রধান জামাত হবে রংপুর জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। সেখানে দ্বিতীয় জামাত হবে ৯টায়।

এবার জেলার পাঁচ হাজার ৯০টি মসজিদ সংলগ্ন এলাকার ঈদগাহ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। একই মাঠে দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া শহরের বড় মসজিদে সকাল ৮টায়, মাদানী নূর মার্কাজ মসজিদ মাঠে সকাল ৭টা ও সাড়ে ৮টায় জামাত হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied