ডেস্ক: মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য বিজেপির নেত্রী নূপুর শর্মার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
শুক্রবার (১ জুলাই) এক নির্দেশনায় দেশটির শীর্ষ আদালত বলেছেন, মহানবী (স.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতজুড়ে উত্তেজনা উসকে দিয়েছেন নূপুর শর্মা। আদালত আরও বলছেন, এজন্য পুরো দেশের কাছে তার ক্ষমতা চাওয়া উচিত। খবর এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের।
বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে বর্তমানে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তার জন্য নূপুরকে দায়ী করেছেন দেশটির শীর্ষ আদালত। আদালত বলেছেন, ‘আমরা ওই বিতর্ক অনুষ্ঠানটি দেখেছি। যেভাবে তিনি কথাগুলো বলেছেন তাও দেখেছি।’ এরপর নূপুর শর্মাকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনি নিজে একজন আইনজীবী হয়ে যা করেছেন তা লজ্জার। আপনার উচিত সারা দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’
বিতর্কিত ওই মন্তব্যের কারণে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে ভারতের একাধিক রাজ্যে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দায়ের হওয়া সেসব এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার আর্জি নিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে হাজির হন নূপুর। এ সময় তার আইনজীবী বলেন, নূপুরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, ‘তিনি হুমকির মুখে পড়ছেন, নাকি তিনিই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন। তিনি সারা দেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছেন। আজ পুরো দেশে যা ঘটছে, তার জন্য দায়ী একা এই নারী।’
এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার ব্যাপারে নূপুরের আর্জি খারিজ করে দেন শীর্ষ আদালত। আদালত বলেন, ‘এই পিটিশনে তার ঔদ্ধত্য ঠিকরে বেরোচ্ছে, যেন দেশের ম্যাজিস্ট্রেটরা তার কাছে খুবই ছোট।’
গত মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টাইমস নাউ ওয়ান-এ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) ও তার স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা।
এরপর তার ওই মন্তব্য সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি পোস্ট দেন দলটির দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল।
বিতর্কিত ওই মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। রাজ্যে রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোসহ পুরো মুসলিম বিশ্ব।
কূটনীতিক তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত প্রভৃতি আরব দেশ। সেই সঙ্গে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। অবশেষে চাপের মুখে বাধ্য হয়ে নূপুর শর্মা ও নভিন জিন্দালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিজেপি।
ওই মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে যে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। সবশেষ নূপুর শর্মার অবস্থান সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় রাজস্থানের উদয়পুরে কানাইয়া লাল নামের এক দর্জি হত্যার শিকার হন। হত্যার সময় দুই ঘাতক দাবি করে, ইসলাম ধর্মকে অবমাননার প্রতিশোধ নিচ্ছে তারা।
বিচারকরা আরও বলেছেন, ‘নূপুরের অবিবেচকের মতো মন্তব্যের কারণেই উদয়পুরের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আদালত আরও বলেছেন, নূপুরের মন্তব্য মানুষের আবেগ উসকে দেয়ার মতো। মন্তব্যের পর নূপুর ক্ষমা চাইতেও দেরি করেছেন।’