আর্কাইভ  বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫ ● ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫
ইরানে স্টারলিংক নিষিদ্ধ, ইসরায়েল-সহযোগীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড

পার্লামেন্টে নিরাপত্তা আইন পাস
ইরানে স্টারলিংক নিষিদ্ধ, ইসরায়েল-সহযোগীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড

ইরান কি এবার পারমাণবিক বোমা বানাবেই? জনতার চাপ তুঙ্গে!

ইরান কি এবার পারমাণবিক বোমা বানাবেই? জনতার চাপ তুঙ্গে!

ইরানে শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় জানাজায় মানুষের ঢল

ইরানে শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় জানাজায় মানুষের ঢল

গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৭২ জনের, মোট নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার ৩০০

ইসরায়েলের হামলা
গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৭২ জনের, মোট নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার ৩০০

মানবতাবিরোধী অপরাধ

পলাতক শেখ হাসিনা ও কামালের বিচারের প্রক্রিয়া কী?

সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, দুপুর ১১:৩৮

Ad

নিউজ ডেস্ক:  গত বছরের জুলাই-আগস্টে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ দেওয়াসহ নানান অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা দুজনই বর্তমানে পলাতক।

পলাতক দুই আসামিকে আদালতে হাজির হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজি দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের উপস্থিতির নির্দেশ সংবলিত নোটিশ জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত ১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তিন আসামির মধ্যে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এরপর এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ জুন দিন ঠিক করেন আদালত।

গত ১৬ জুন শুনানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, তারা সম্ভাব্য অবস্থানে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পত্রপত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, তারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের পরবর্তীতে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তবে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী সংবাদপত্রের বিজ্ঞপ্তির পরও তারা এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু হবে।

অভিযোগ গঠনের শুনানি লাইভ সম্প্রচার

গত ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বিচার প্রক্রিয়া সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে উৎখাত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম।

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। এতে শেখ হাসিনা ও অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন ও নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিরা আগামী ২৪ জুন আদালতে উপস্থিত না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শুরু করার জন্যে আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। -আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম

তিনজনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগ অনুযায়ী, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ বাস্তবায়নে পুলিশ, র‌্যাবসহ অধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হত্যা, সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করেছেন। অপরাধ সংঘটন প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও অপরাধ সংঘটন করেছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। এমন পাঁচ ধরনের অপরাধের অভিযোগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিচারের প্রক্রিয়া কী

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন ও নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিরা আগামী ২৪ জুন আদালতে উপস্থিত না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শুরু করার জন্যে আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

তাজুল ইসলাম জানান, পলাতক থাকা আসামিদের উপস্থিত হওয়ার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি আসামিরা উপস্থিত হন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করেন তা হলে তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের শুনানির দিন ঠিক করবেন আদালত। আর যদি আসামিরা উপস্থিত না হন তাদের পলাতক দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আসামিপক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষী গ্রহণের দিন ঠিক করবেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের প্রয়োজনীয় সাক্ষী (পিডব্লিউ) উপস্থাপন শেষ হলে আসামিপক্ষ চাইলে তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য (ডিডব্লিউ) দিতে পারবেন। উভয়পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে রায় ঘোষণা করা হবে।

আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান জাগো নিউজকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলায় ফরমাল চার্জ গঠনের জন্য পলাতক আসামিদের প্রতি ট্রাইব্যুনাল থেকে দেশের জাতীয় দৈনিকে সমন জারির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে যে গ্রেফতার আছেন তিনি তো কারাগারেই আছেন। কিন্তু এই মামলায় যে সব আসামি পলাতক থাকবেন তাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পরও যদি তারা আত্মসমর্পণ না করেন বা গ্রেফতার না হন তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ শুরু হবে এবং আসামিরা রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের পক্ষে আইনজীবী পাবেন। রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের পক্ষে মামলায় লড়াই করবে এই হলো নিয়ম। এরপর আদালত নির্দিষ্ট দিন তারিখ ঠিক করবেন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য। অভিযোগ গঠনের আদেশ দিলে এবং সাক্ষী গ্রহণের দিন ঠিক করার মধ্যে দিয়ে বিচার কাজ শুরু হবে।

২০১০ থেকে ২০২৪ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের একটি বিষয় ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার। সেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মূলত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্যই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে ২০১০ সালের আগে আইনে কারও বিচার বা সাজা হয়নি। ২০০৯ সালে সংসদ অধিবেশনে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার’ বিষয়ে একটি মৌখিক প্রস্তাব পাস হয়। পরবর্তীসময়ে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনা এবং স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনার বিধান যুক্ত করে আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমেই ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্টে হওয়া গণহত্যার বিচারের জন্য ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে। বিচারিক প্যানেলে আরও আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গণহত্যার দুই মামলার প্রথম শুনানি হয় ১৭ অক্টোবর। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। দুটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানো হয়েছে।

এরপর গত ৮ মে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পান বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

মন্তব্য করুন


Link copied