নিউজ ডেস্ক: সচিবালয়ে ‘গুন্ডামি, লালফিতা ও লেজুড়বৃত্তি’ চলছে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে যে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি সচিবালয়ে পড়া উচিত ছিল।
রোববার (অক্টোবর ২৬) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কার্যালয়ে চলমান বিসিএসগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব জায়গায় ‘গুন্ডামি’ চালাচ্ছে অভিযোগ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। জুলাই আন্দোলনের পর আমলারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিলেও চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, পিএসসি চায় আর্থিক অটোনমি, পিএসসি চায় ফাংশনাল অটোনমি, আর আমরা দেখি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সব জায়গায় এক ধরনের গুন্ডামি। সব জায়গায়। এরা একটা গুন্ডামি চালায়, সব কিছুতে। প্রত্যেকটা ফাইল ওখানে দিন শেষে আটকায় দেয়। কিন্তু আমরা দেখতে পেরেছি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসির মধ্যে সমন্বয় নেই। চাকরি প্রার্থীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নোট বুকের মধ্যে প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যেই নেই।
হাসনাত বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত, পোস্টিং প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত। ৫ আগস্টের পর কেউ সবচেয়ে বেশি বেনিফিট পেয়ে থাকলে তা আমলারা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা হাসনাত বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবো। এ গুন্ডামি থামাতে হবে। আমাদেরকে লালফিতার দৌরাত্ব্য, লেজুড়ভিত্তির দৌরাত্ব্য থামাতে হবে।
সচিবালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চিন্তা করেন কী পরিমাণ সনাতনী চিন্তা ভাবনা, মধ্যযুগীয় চিন্তা ভাবনা- ২০১ নম্বর রুম থেকে ২০২ নম্বর রুমে তারা চিঠি পাঠায়। এই চিঠিটা প্রথমে জিপিওতে যায়, ২০১ থেকে ২০২ নম্বরে একটা রিক্যুজিশন দিবে, ধরেন ময়লার ঝুড়ি কিনবে, তখন একটা চিঠি পাঠাবে। এটা যাবে জিপিওতে, জিপিওতে আসবে ২০২ নম্বর রুমে। সেখানে অ্যাপ্রুভ হবে। ২০২ নম্বর রুম এটা আবার জিপিওতে পাঠাবে। জিপিও আবার ২০১ নম্বরে পাঠাবে। অথচ তাদের সঙ্গে তাদের চা খেতে দেখা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ে বাদাম, ফল খেতেও দেখা হচ্ছে, নিয়মিত দেখা হচ্ছে, সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হচ্ছে, একসঙ্গে ব্যবসাপাতি করছে, একসঙ্গে পারসেন্ট ভাগাভাগিও করছে। সবই করছে কিন্তু কাজ করার ক্ষেত্রে এই জিনিসগুলো।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রশাসনের পুরো চেহারা আমাদের পাল্টাইতে হবে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, কিছুদিন আগে খুবই দুঃখজনক ঘটনা মাইলস্টোনে যে বিমানটা পড়েছে, ওইটা মাইলস্টোনে না পড়ে সচিবালয়ে পড়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, এ সচিবালয়ে সবচেয়ে বড় গুন্ডামি, সবচেয়ে বড় স্বৈরতন্ত্র, যারা আমাদের মানুষ মনে করে না। তবে এটা আমাদের আশার বিষয় সচিবালয়ে অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা অনেক বেশি স্মার্ট, আধুনিক, যারা পরিবর্তন আনতে চায়। কিন্তু কিছু পশ্চাৎপদ অফিসার রয়েছে, আমলা রয়েছে। একজন সচিব বলছে উনি বাটন ফোন ব্যবহার করেন। আপনি চিন্তা করেন, এই যুগে এসেও উনি বাটন ফোন ব্যবহার করেন। এই যুগে এসেও একজন মানুষ বাটন ফোন ব্যবহার করেন। এটাকে এন্টারটেইন করার কিছু নেই। এটাকে অযোগ্যতা হিসেবে আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য রাজনীতিবিদদের নোটবুকেও আমরা নেই। রাজনীতিবিদরা নির্বাচন, আসন ভাগাভাগি, পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এখানে অনেক চাকরি প্রার্থী আছেন। এটা রূঢ় বাস্তবতা। আপনারা শুধু সংখ্যায় মেটার করেন। কোনো একটা আন্দোলন হোক তখন আপনারা নামবেন। একজন রাজনীতিবিদ এসে সামনে দাঁড়াবে, তখন ওই রাজনীতিবিদের পোর্টফোলিও ভারী হবে। যে আমার পেছনে অনেক মানুষ জন আছে।
এর আগে চলমান বিসিএসগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে (পিএসসি) সাক্ষাৎ করেন এনসিপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে টিমে আরও ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া। এ সময় বিভিন্ন দাবিতে দলটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসির কাছে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।