নিউজ ডেস্ক: গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের পর বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি। ঢাকার সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন নতুন সুযোগ তৈরি করেছে পাকিস্তানের জন্য। ফলে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে শীতল থাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদ।
গত এক বছরে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের সফরে ঢাকায় এসেছে পাকিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় পাকিস্তান, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রগুলোতে।
সম্প্রতি ২০ আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় সরাসরি পরিবহন সংযোগ, পারস্পরিক বিনিয়োগ সহযোগিতা, অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার এবং যৌথ অর্থনৈতিক মিশন পুনরায় চালুর বিষয়ে কথা হয়।
এর তিন দিন পর ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। দীর্ঘ ১৩ বছর পর কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে ইসলামাবাদ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে দেখছে। সফরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গেও তার বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ, যা ছিল প্রায় ১৫ বছর পর দুই দেশের মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসাল্টেশন। জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন রাজা নগরভি, যিনি ভিসামুক্ত চুক্তি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের প্রস্তাব দেন।
কূটনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকায় প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হলেও শেখ হাসিনার পতন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব ইসলামাবাদের জন্য নতুন কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে। পাকিস্তান তাই শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও ঢাকায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে।