আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

শেখ হাসিনা সাড়ে ১৫ বছর মানুষকে শান্তি দেয়নি-নীলফামারীতে জামায়াতে ইসলামীর আমীর

শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪, বিকাল ০৭:২০

Advertisement Advertisement

বিশেষ প্রতিনিধি॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগের লোকজন সাধারণ মানুষকে শান্তি দেয়নি। দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নিগৃহিত, নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় দলটি।  
শুক্রবার(৮ নভেম্বর) দুপুরে নীলফামারী জেলা শহরের পৌরসভা মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। 
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখার আমীর অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তৃতা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার।
এদিন সকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি। এর আগে জেলার বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে সভাস্থলে সমবেত হন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারী ক্ষমতায় আহরণ করার পরে ঝাল মিটেয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। দুইমাস যায়নি ফেব্রুয়ারীর ২৫ এবং ২৬ তারিখ ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে প্রিয দেশের ৫৭জন চৌখোস, সাহসী, দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সামরিক কর্মকর্তাদেরকে তারা হত্যা করেছিল। হত্যা করেছিলছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দকে। লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল পিলখানার ড্রেনের মধ্যে। রাতে বাতি নিভেয়ে ঘাতকদেরকে পিলখানা থেকে পালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘাতকরা কারা ছিল ? এদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেওয়া হয়নি, ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নিজস্ব একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। তারা তন্ন তন্ন করে খোঁজনিয়ে সত্যটা তুলে এনেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর তদন্ত রির্পোট প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। যারা একথাগুলো সাহসের সাথে উচ্চারণ করেছিল, তাদের সহকর্মীদের হত্যার ব্যাপারে তার কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ে ঝাল মিটিয়ে তাদেরকে চাকুরী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বরেন,‘স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী কারাগার থেকে মুক্তি  পেয়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন শেখমুজিবুর সাহেব। তিনি ফিরে এসে এদেশের দায়িত্বভার গ্রহন করেছিলেন। তাঁর শাসনামলে  ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেচিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে যদ্ধাপরাধের অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের কারো বিরুদ্ধে তখন একটি মামলাও দায়ের করা হয় নাই। যুদ্ধাপরাধী নির্বাচন করতে গিয়ে, বাছাই করতে গিয়ে দফায় দফায় সতর্কতারসাথে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার কাজ করে ১৯৫ জনকে তালিকাভুক্ত করেছিল। যারমধ্যে  বর্তমান বাংলাদেশের এই সীমানার ভিতরে কোন নাগরিক ছিলেন না। যদি সত্যি জামায়েতে ইসলামী এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের কোন না কোন থানায় একটা হলেও মামলা দায়ের করা হতো। একটা থানায়ও কোন মামলা ছিল না। তাহলে কেন এই ১১জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো’?
’২৪ এর শহীদদের লাশ এখন আমাদের জাতির ঘারে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমাদের আচরণে প্রমান করতে হবে, রাজনীতিতে প্রমান করতে হবে, আগামী দেশ পরিচালনায় প্রমান করতে হবে যে আমরা এই শহীদেরকো শ্রদ্ধা করি। এ প্রমান করতে হলে এমন একজন মানুষ লাগবে যারা মুখে যা বলবে কাজেও তাই করবে’।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথায় তিনি বলেন,‘একজন শাসক সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেছেন। তিনি যখন কথা বলতেন মানুষ বলতো, ও হাসিনা আমরা আর হাসি না। তিনি মানুষকে উত্তেজিত করতেন, হাসানোর চেষ্টা করতেন, যেমন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তেমন ছিলেন তার উজির-নাজির সবাই। কে কার চেয়ে বেশি মিথ্যা কথা বলবেন এই ছিল প্রতিযোগিতা। তারা জাতিকে ধোকা দিয়েছে, তারা জাতির ওপর জুলুম করেছে,  মানুষ খুন করেছে, গণহত্যা সংগঠিত করেছে, গুম করে আয়ানাঘর তৈরী করেছে, হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে আর জামায়াতে ইসলামীর  কেন্দ্রীয় কার্যায়সহ সারা বাংলাদেশের অফিসগুলো সীলগালা করে দিয়েছে। ঘরের মাঝে বসেও আমরা শান্তি পাইনি। আমাদেরকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়েছে। এসবগুলো ছিল চলমান বাংলাদেশের বাস্তবতা। সেগুলো কষ্ট নিয়ে আমরা এপর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছি’।
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হতে পারে, নির্দয় হতে পারে, পাষাণ হতে পারে, খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রমান করে আমরা দায়িত্বশীল এবং দেশ প্রেমিক উল্লেখ করে বলেন,‘ সাবেক সরকারের সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে দাম্ভিকতা প্রকাশ করতেন, অহংকার করে কথা বলতেন। তিনি বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দুই দিনের মাথায় পাঁচ লাখ মানুষ খুন হবে। কিন্তু ৫ ও ৬ আগস্ট একজন মানুষও খুন হয়নি’।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার কথায় তিনি বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কোথাও পালাবেন না। তিনিও পালালেন, তিনিও চলে গেলেন, তিনি তার প্রিয় দেশে আশ্রয় নিলেন। প্রতিবেশিকে আমরা সন্মান করি। আমরা বিশ^াস করি প্রতিবেশি ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। আমার প্রতিবেশিকে কষ্ট দিলে অনুরূপ কষ্টের জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং কোন প্রতিবেশিকে ডিস্টার্ব করা আমরা পছন্দ করি না। অনুরূপ কোন প্রতিবেশির কাছ থেকে আমরা সুপ্রতিবেশির আচরণ পেতে চাই’। 
শেখ হাসিনাকে ফেরতের কথায় বলেন,‘আমরা আমাদের প্রতিবেশির প্রতি অনুরোধ করবো। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। দেড় শতের অধিক মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা আছে, গুমের মামলা আছে, অনেক মামলা তাঁর বিরুদ্ধে আছে।  আমাদের বিচারালয় যখন চাইবে, মেহেরবানি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আপনারা তাঁকে তুলে দেবেন। আমরা চাই সাড়ে ১৫ বছর গোটা জাতির বিরুদ্ধে তারা জুলুম করেছে। বিচারের নামে তামশা করেছে, অবিচার করেছে। আমরা চাই শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের জন্য এটা যেন করা না হয়। তাঁদের জন্য যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিৎ করা হয়। আমরা বিশ^াস কারি জাতি যদি ন্যায় বিচার পায়, তারা ইসশাল্লাহ শাস্তি পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। এই শাস্তি ফাঁসি হতে পারে, আমৃত্যু কারাবরণ হবে পারে, আজীবন হতে পারে, অথরা বিভিন্ন মেয়াদে হতে পারে। অপরাধ যে মাত্রার, শাস্তি হবে সেই মাত্রার। এই পাওয়াটা হচ্ছে নায্যতার দাবি। অপরাধী যদি অপরাধ করে শাস্তি না পায় তাহলে অন্য অপরাধীরা উৎসাহ পাবে’। 
কেমন বাংলাদেশ চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান ইস্যু হলো সমাজে বৈষম্যহীন ন্যায় বিচার নিশ্চিৎ করা। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা কোন অপরাধ করবো না। আমরা কোন দুর্নীতি লুণ্ঠন করবো না এবং আমরা কাউকে দুর্নীতি লুণ্ঠন করতে দিবো না। আমরা নিজেরা ঘুষ খাইনা এবং কাউকে ঘুষ খাইতেও দিবো না।  আদালতে অফিসে বিভিন্ন জায়গায়, সরকারি স্বায়ত্বশাসিত বিভিন্ন সংস্থায় জনগণ সেবা পাওয়ার জন্য যাবে। সেখানো কোন লাল ফিতার দৌঁরাত্ব দেখানো হবে না।  সেবকরা নিজেকে দেশের মালিক ভাববেন না। যারা এ দেশের দায়িত্ব পাবেন, তারা দেশের সেবকে পরিণত হবেন’।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল,  রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রটারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি  রাজিবুর রহমান পলাশ, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি তাজমুল হাসান প্রমুখ।

মন্তব্য করুন


Link copied