আর্কাইভ  শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫ ● ৮ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

♦ যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রেও
♦ নির্বাচনে আগ্রহীরা ঘুরছেন এলাকায়
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনা
মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

শেষ সময়ে ‘ব্যাকডেটে’ গণহারে পদ দিল ছাত্রলীগ

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২, দুপুর ১১:০৫

Advertisement Advertisement

আজ উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন শুরু হবে। সেখানেই নির্ধারণ হবে সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব। অথচ সম্মেলনের একদিন আগেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে গণহারে পদ দেওয়া হয়েছে। তাও আবার ব্যাকডেটে অর্থাৎ পুরোনো তারিখ উল্লেখ করে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এর আগে এমনটি হয়নি। এটি চরম লজ্জাজনক।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর গত এক সপ্তাহ ধরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে কয়েকশ নেতাকে পদ দেওয়া হয়েছে। এদের কেউ কেউ আগে ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটে কোনো পদেই ছিলেন না। অথচ রাতারাতি বনে গেছেন কেন্দ্রীয় নেতা। এদের অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত প্যাড পোস্ট করে নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতা জাহির করছেন। অনেকে তাদের প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। তবে রহস্যজনক বিষয় হলো- সব প্যাড চার মাস আগের তারিখে (৩১-০৭-২০২২) ইস্যু করা। সম্মেলনের আগেরদিন সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই চিত্র দেখা গেছে।

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে। গত কয়েকদিনে সারাদেশের অনেক নেতাকর্মীকে গণহারে এই পদ দেওয়া হয়েছে। আর সম্মেলনের আগেরদিনেও অনেককে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বিভিন্ন উপ সম্পাদকের মতো পদও দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দুই দফায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে গণহারে পদ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে গণহারে পদ দেওয়া শুরু হয়। সেসময় সমালোচনার মুখে নতুন করে পদ দেওয়া বন্ধ রেখেছিল ছাত্রলীগ। তবে শেষ সময়ে এসে আবারও সেই একই চিত্র দেখা গেছে।

ব্যাকডেটে কোনো পদ দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এক উপ-দপ্তর সম্পাদক বলেন, চিঠিগুলো আগেই ইস্যু করা হয়েছিল। অনেকেই সেসময় চিঠি নেয়নি। অনেকে আবার সহ-সম্পাদকের চেয়ে বড় পদ আশা করছিলো, তাই রাগ করে সেসময় চিঠি নেয়নি।

এদিকে গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে কতজনকে নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে, সে হিসেব কেন্দ্রীয় দপ্তর সেল দিতে পারেনি। এ বিষয়ে দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা নেই এবং কোনো মন্তব্য নেই। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন।’ তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এখন পর্যন্ত কেউ কেউ পৌরসভা বা ইউনিয়ন কমিটিতে আছি। উপজেলা পর্যায়ে চেষ্টা করেও পদ পাইনি। অথচ এমনও দেখছি যারা পূর্বে ছাত্রলীগের কোনো শাখার কোনো পদেই ছিলো না, হয়তো মাঝে-মধ্যে মিটিং মিছিলে উপস্থিত হতো, ঘোরাফেরা করত। তারা রাতারাতি কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে গেছে। ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে গেছে যে, ইউনিয়ন বা উপজেলা ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া সহজ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব পদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, এভাবে গণহারে পদ দেওয়া গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। এর ফলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যেই ছেলে মাঠ পর্যায়ে নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না তাকে সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটে এবং ভিন্নমতের লোকেরা ভিতরে ঢুকে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করে। এ ছাড়া যেহেতু সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেখানে এর একটা বাজে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে গণহারে পদায়নে বিব্রত সংগঠনটির সাবেক নেতারাও। সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি (সোহাগ-জাকির কমিটি) হাফিজুর রহমান সজীব বলেন, এই ঘটনা আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক। ছাত্রলীগের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত করেছেন জয়-লেখক। এটির নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই।

এদিক সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী গতকাল ফেসবুকে লিখেছেন,‌ ‍‘পদ পাওয়া’ আর ‘নেতা হওয়া’ যে মোটেও এক বিষয় নয়, এটা অনুধাবন ও উপলব্ধি করার মতো বোধ ও গুণগত পরিবর্তন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আসা জরুরি। সাইন দিয়ে কাউকে ‘পদধারী’ বানানো যায়, নেতা নয়! নেতা যেমন বানানো যায় না, আবার চাইলেই হওয়া যায় না! আক্ষরিক অর্থে ‘নেতা’ হতে অনেক তপস্যা, শ্রম-ঘাম, মেধা-মনন, আর সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে গণমানুষের আকুণ্ঠ সমর্থন ও দোয়া-ভালোবাসা অর্জনের প্রয়োজন হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে, ২০১৮ সালের মে মাসে ছাত্রলীগের ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। তবে মাত্র এক বছরের মাথায় অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন মাস পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন


Link copied