নিউজ ডেস্ক: ন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ডসহ সব বেসরকারি টেলিভিশনে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। আমি ঘোষণা করেছি যে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি দায়িত্ব ন্যাস্ত ছিল উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, একটি জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের আয়োজন করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের প্রথম রায় শীঘ্রই দিতে যাচ্ছে ট্রাইব্যুনালে আরও কয়েকটি মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণ ফৌজদারি আদালতগুলোতেও জুলাই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত কিছু বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আমরা একইসাথে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গুমের মতো নৃশংস অপরাধের বিচারকাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার নিজ উদ্যোগে বা বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছে। কিছু প্রস্তাবিত সংস্কারের কাজ এখনও চলমান আছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে বা বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সুশাসনের জন্য এসব সংস্কার বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। আশা করি, আগামী নির্বাচিত সরকার সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব সংস্কার গ্রহণ করবে।
সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করাকে সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
ড. ইউনূস জানান, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে ণভোটের ব্যালটে থাকবে চারটি প্রশ্ন।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা চারটি প্রশ্ন সম্পর্কেও জানান। তিনি বলেন, প্রশ্ন থাকবে - ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন। গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিগণ একইসাথে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে আমাদের জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাঁরা আজ আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।