আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি       রংপুর বিভাগে আসছেন ভূমিমন্ত্রী       রংপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত       রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ আদায়       যুদ্ধ নয়, আলোচনায় সমাধান সম্ভব : প্রধানমন্ত্রী      

 width=
 

বান কি মুন কি বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ দেখতে চান!

বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০১৪, দুপুর ১০:৪০

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান

রাষ্ট্রপতি সংসদ গঠনের জন্য সংবিধানের ১১৯(১)(খ) ধারায় সংসদ-সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধানের ১১৮ ধারা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগদান করে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। ওই নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি-২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করিয়ে সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তে ওই নির্বাচনকে বৈধ বলে ঘোষণা ও স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদিও অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এমন কি অনেক রাজনৈতিক দল তখন নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সাংগঠনিক অক্ষমতার কারণে সেদিন তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি যা ছিল ওই সব দলের ব্যর্থতা। সেদিন কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিনিধি তারানকো দুটি বড় দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক ও সংলাপ করে সবাইকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারেননি। তারানকো তার ব্যর্থ মিশনের পরে সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে না পারার কথা স্বীকার করে সরকারকে একতরফা নির্বাচনের কথা বলে গিয়েছিলেন। তিনি ১১ ডিসেম্বর-২০১৩ তারিখে বলে গিয়েছিলেন 'বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট-কাল উত্তরণের সমাধান রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আপসমূলক মনোভাব' এবং তিনি আরও বলেছিলেন, 'বর্তমান সংকট-কাল উত্তরণের জন্য প্রয়োজন লাগাতার সংলাপ যা আমি সফলতার সঙ্গে শুরু করে যেতে পারলাম'। সেদিন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেছিলেন, 'নেতৃত্বের বিষয়টিই সংকটের মূল কারণ'। তারানকোর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ১২ ডিসেম্বর-২০১৩ তারিখে ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছিলাম এবং এর কপি জাতিসংঘের ই-মেইলেও পাঠিয়েছিলাম। তারানকো সেদিন ওই সময়কার রাজনৈতিক সংকট-কালের জন্য বিএনপির নেত্রীকেই দায়ী করে সরকারকে একতরফা নির্বাচনের সবুজ সংকেত দিয়ে গিয়েছিলেন। কোনো সদাশয় মহোদয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত অবগত হতে আগ্রহান্বিত হলে ১২ ডিসেম্বর-২০১৩ তারিখের আমার স্টেটাসটি দেখার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ রাখব।

সংলাপ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো বিষয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঐকমত্যে পেঁৗছতে হলে সংলাপের চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই এবং এটি জানার জন্য বাল্যশিক্ষারও প্রয়োজন নেই। তবে শক্তির কাছে যে সংলাপের কোনো গুরুত্ব নেই তা জানার জন্য অনেক বিদ্যা-বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে, তা না হলে মার খেয়ে সে সত্যি উপলব্ধি করতে হয়।

কোনো রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজনীয়তা বর্তমান সরকার মনে করেনি। প্রধানমন্ত্রী যোগ্যতার সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট-কাল অতিক্রম করে আসছেন। বিএনপি শত চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর সফলতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারছে না। আগামী সাড়ে চার বছরেও প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে কোনো সমস্যা মনে করছেন না, এমন কি আগামীতে তিনি বিএনপির অস্তিত্বই দেখতে পাচ্ছেন না। বিষয়টি কোনো ভবিষ্যৎ কল্পকথা নয়। বিএনপির বর্তমান হাল-হকিকত, সাংগঠনিক ক্ষমতার ধস, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের তীব্র অভাব, নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, দলের ওপর চেয়ারপারসনের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ, যোগ্য উত্তরসূরির অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং সর্বোপরি তথাকথিত আন্দোলনের ফাঁকা বুলি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে এখন আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করেন না এবং মনে করার কোনো কারণও নেই। তাই বিএনপি কোনো রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন না। যার ফলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো আগ্রহ প্রধানমন্ত্রীর নেই।

সংলাপের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বসে নেই। তিনি ভালো করেই জানেন আগামী দিনে তাকে সামলাতে হবে কোনো বড় রাজনৈতিক সমস্যা। তাই তিনি ইতিমধ্যেই ওই সমস্যার একটি আপস সমাধানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়তো মনে করেন জামায়াত আগামী দিনে তার অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ওই বাধাকে অতিক্রম করার জন্য তিনি যে ইতিমধ্যেই জামায়াতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সংলাপ শুরু করে দিয়েছেন এবং সেই সংলাপের সুফলও তিনি পাচ্ছেন তার ইতিবাচক নিদর্শন পরিলক্ষিত হচ্ছে। জামায়াত প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য ভেঙে চলে না এলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে একা চলা শুরু করে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না গেলেও গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিকে নামিয়ে দিয়ে জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচন করে জয়ের সুফল তার নিজ ঘরে তুলে নিয়েছে। জামায়াত তথাকথিত আন্দোলনের পথ ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ উল্টা পথে সরকারের সঙ্গে হাত মিলাতে তাদের নতুন রাজনীতি শুরু করেছে। বিএনপির সঙ্গে গত পাঁচ বছরে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বাত্মক সহিংস আন্দোলন করেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের করালগ্রাস থেকে তাদের নেতাদের ও দলকে বাঁচাতে প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। জামায়াতের মূল চালিকাশক্তি গোলাম আযম বৃদ্ধ বয়সে কারা নির্যাতন ভোগ করছেন। জামায়াতের প্রধান থেকে শুরু করে প্রায় সব শীর্ষনেতাই মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা নিয়ে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করছেন। ইতিহাসের ভয়ংকরতম সহিংস আন্দোলন করেও জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকানো যায়নি। আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য জামায়াত মূলত বিএনপিকে দায়ী করে। তাই জামায়াত বিএনপিকে ছেড়ে দিয়ে তথাকথিত সহিংস আন্দোলনের পথ পরিহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার লিপ্সার রাজনীতি থেকে সরে এসে আবারও অস্তিত্ব রক্ষার রাজনীতি চরম বাস্তবতার আলোকে গ্রহণ করেছে। ৫ জানুয়ারির পরে জামায়াত বিএনপির কোনো কার্যক্রমে তেমন কোনো অংশগ্রহণ করেনি এবং আলাদাভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া সরকারবিরোধী কোনো প্রকার আন্দোলনেও অংশ নেয়নি। সরকারের সঙ্গে অাঁতাতের নতুন রাজনীতির সুফল জামায়াত ইতিমধ্যেই দর্শনীয়ভাবে পেতে শুরু করেছে। আইনমন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার আইনগত ক্ষমতা সরকারের নেই। ব্যাপক আন্দোলন করেও হেফাজতে ইসলামের মতো একটি বিশাল ধর্মীয় শক্তি যেখানে গণজাগরণ মঞ্চকে শাহবাগ থেকে একচুলও নড়াতে পারেনি, সরকার সেখানে নিজে থেকেই তারুণ্যের নতুন মুক্তিযোদ্ধা গণজাগরণ মঞ্চকে ঠেঙ্গিয়ে নরসিংদী নিয়ে গেছে। জামায়াতের আমির নিজামী সাহেবের অসুস্থতার জন্য রায়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে তড়িঘড়ি করে দেওয়া ফাঁসির আদেশের আপিল এখনো সদয় বিবেচনাধীন। সচেতন মানুষের ধারণা, ফাঁসির আদেশের আপিল হয়তো অনেক ধুলার নিচে মাটিচাপা পড়ে যেতে পারে।

জামায়াতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে সমস্যা বা সংকটের মূলত দুটি দিক। প্রথমত হলো, প্রধানমন্ত্রী যদি তার ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মহীন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথামতো জামায়াতকে নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করেন তাহলে জামায়াত দেশে কতটা সংকট সৃষ্টি করতে পারবে এবং ওই সংকট উত্তরণে কী পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করা প্রয়োজন পড়বে। দ্বিতীয়ত ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মহীন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথামতো জামায়াতকে নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর না করেন তাহলে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার জন্য কতটুকু সংকট সৃষ্টি করতে পারবে এবং সেই সংকটে প্রধানমন্ত্রীর কতটুকু ক্ষতি হবে। উভয়দিকের সংকটের চুলচেরা বিশ্লেষণই বর্তমান রাজনীতিতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে দিবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে পরিকল্পনার ছক অাঁকছেন যদিও অতি উৎসাহীরা মাঝে-মধ্যে ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী তাতে খুব বিচলিত বলে মনে হয় না।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে আলাপচারিতায় সংলাপ নিয়ে রাষ্ট্রপতির প্রকাশ্য বক্তব্য দেওয়ার পরে একই ব্যাপারে বিপরীত বক্তব্য দেওয়ায় মহাসচিবের অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে তা জনগণের সামনে ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিও সার্বভৌম ও স্বাধীন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য জনগণের বক্তব্য। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে জনগণ দুঃখ ও কষ্ট পেতে পারে, এমনকি সেই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতও পোষণ করতে পারে কিন্তু তা কখনোই অমান্য করতে পারে না। রাষ্ট্রপতি বান কি মুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সেই সাক্ষাতের আলোচনাও ছিল সৌজন্যমূলক। কিন্তু বান কি মুন সাহেব সেই আলোচনায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছেন তা সত্যিই নিন্দনীয়। বান কি মুন ন্যক্কারজনকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে তথাকথিত সংলাপের নামে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে উসকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। জাতিসংঘ একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, যার অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রতিটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অশান্তি থেকে প্রতিটি রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখা। ৫ জানুয়ারি-২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশে যখন প্রচণ্ড সহিংস রাজনীতি চলছিল তখন পরম পরাক্রমশালী মহাসচিব সেই সহিংসতা নিরসনে কিছুই করতে পারেননি। তিনি তখন দেশের সাধারণ জনগণের জানমাল রক্ষায় কিছুই করেননি। অথচ বান কি মুন সাহেবের বিশেষ দূত তারানকো তখন বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট-কাল উত্তরণের সমাধান রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আপসমূলক মনোভাব' এবং 'নেতৃত্বের বিষয়টিই সংকটের মূল কারণ'।

সেদিন তারানকো নেতৃত্বের বিষয়টি সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে সংকট উত্তরণের সমাধান রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আপসমূলক মনোভাব বলে প্রেসক্রিপশন দিয়েছিলেন। সে প্রেসক্রিপশন মোতাবেক দেশের রাজনীতিতে শান্তি ফিরে এসেছে। স্বভাবতই বান কি মুনের উসকানিমূলক বক্তব্যের হেতু নিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে।

৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে হয়েছে এবং উচ্চ আদালতও এই সংসদকে বৈধতা দিয়েছে। আমি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এই সংসদকে মেনে নিচ্ছি না। আমার ব্যক্তিগত মতামত- এই সংসদ নির্বাচন আমার সুবিধামতো হয়নি এবং এ জন্য সংসদ নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই নির্বাচন প্রতিহত করারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নির্বাচন প্রতিহত করতে পারিনি এবং সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো নির্বাচন প্রতিহত কর্মকাণ্ডে আমাকে সাহায্য করতেও কেউ এগিয়ে আসেনি। মনে হয় আমার এই ব্যক্তিগত অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক সাধারণ মানুষ একমত আছেন, হয়তো দেশের জ্ঞানী, গুণী ও বরেণ্য ব্যক্তিরাও একমত, সুশীল সমাজের বাঘা বাঘা সচেতন বুদ্ধিজীবীরাও একই মত পোষণ করেন, হয়তো অনেক রাজনৈতিক নেতাও একমত। কিন্তু আমরা তো সম্মিলিতভাবে কেউ এক পতাকার তলে দাঁড়িয়ে নির্বাচনের বিপক্ষের শক্তিকে প্রমাণ করতে পারিনি। গণতন্ত্রের হিসাব বড় বেশি অসভ্য, মূর্খ, অশালীন এবং জঙ্গি! গণতন্ত্রে মাথাগুলো কাদের সেটি বিচার্য নয়, মাথা কতগুলো সেটি বিচার্য। ঘরে বসে লক্ষ কোটি না এর কোনো মূল্য নেই। কিন্তু ব্যালট পেপারে একটি নাম বা মার্কা এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে একটি সিল মারা ব্যালট পেপারই বিজয়ের জন্য যথেষ্ট। এই বিজয় বক্তৃতা, বিবৃতি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম বা প্রেসক্লাব বা গণমাধ্যমে সুন্দর সুন্দর বা তির্যক বচন প্রয়োগ করে ঠেকানো যাবে না, ঠেকাতে হলে রাজপথে মাথা গুনতে হবে এবং সেই মাথার কতগুলো রাজপথে লুটে পড়েছে তার হিসাব করতে হবে। তাই বান কি মুন সাহেব বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পাল্টাতে রাজপথে মাথা গোনার জন্য সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন।

বর্তমান সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকলে জাতিসংঘের সমস্যা কোথায়? আমরা যারা এই সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাই আমরাও তো সাত বছর আগে ক্ষমতায় ছিলাম। ওই সময় তো বান কি মুন সাহেবই জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন। কই সেদিন তো তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াননি। এমনকি বর্তমান সরকারি দলের পক্ষেও দাঁড়াননি। উল্টা উভয় দলের নেতা-কর্মীদের ঠেঙ্গাতে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সেদিন দেশের সাধারণ জনগণের সামনে সেনাবাহিনীকেও ঠেকিয়ে রাখতে তো পারেনইনি, উল্টা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি এমনভাবে নষ্ট করে দিয়েছেন যে, এখনো তা পুনরুদ্ধার করতে পারা যায়নি। সরকার পাঁচ বছরের মাথায় নির্বাচন দিতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। কিন্তু পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন দিতে হলে জনগণকে রাস্তায় নেমে সহিংস আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। সরকার নিশ্চয়ই সুবোধ বালকের মতো বসে বসে সেই আন্দোলন গড়ে ওঠা দেখবে না। আন্দোলন ও আন্দোলন ঠেকাও- এই নিয়ে বাধবে লড়াই। সৃষ্টি হবে অশান্তির। সাম্প্রতিক সময়ের ইউক্রেন ও ইরাকের অভিজ্ঞতা আমাদের আগাম সতর্কতা দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে পাশের শক্তিধররা যে কোনো পক্ষকে সাহায্য করতে এতটুকু দেরি করবে না। তাই কি সংলাপের এত প্রয়োজনীয়তা? তাবৎ বিশ্ব জানে, হয় সংলাপ যুদ্ধের আগে হবে, না হলে যুদ্ধের পরে হবে। সংলাপ করে যদি ফায়সালা না হয় তা হলে তো যুদ্ধ করেই ফায়সালা করতে হবে এবং আবার সংলাপ করে যুদ্ধ থামাতে হবে।

এখন তো আমাদের কোনো যুদ্ধ নাই, তা হলে কি আগামীতে কোনো যুদ্ধের পূর্বাভাস দেখতে পাচ্ছেন যুদ্ধের বাজারের সওদাগর বান কি মুন!

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

rtlbddhaka@yahoo.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied