আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি       রংপুর বিভাগে আসছেন ভূমিমন্ত্রী       রংপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত       রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ আদায়       যুদ্ধ নয়, আলোচনায় সমাধান সম্ভব : প্রধানমন্ত্রী      

 width=
 

জগজিৎ সিং

শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৫, সকাল ০৯:৪৪

বিনোদন ডেস্ক: উপমহাদেশের প্রখ্যাত গজলশিল্পী জগজিৎ সিং। যার সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বময়। উর্দু-হিন্দিতো বটেই, বাংলা গানেও যিনি শাসন করেছেন তার দরাজ কণ্ঠ দিয়ে। বাংলায় গাওয়া অল্প কটি গান- বেশি কিছু আশা করা ভুল, বেদনা মধুর হয়ে যায়, নদীতে তুফান এলে কূল ভেঙে যায়, চোখে চোখ রেখে আমি সুরা পান করিনি, বুঝিনি তো আমি, তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে প্রভৃতি। এ দেশে এখনও গানগুলো সমান জনপ্রিয়।

২০১১ সালের এই দিনে (১০ অক্টোবর) ভারতের মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কিংবদন্তী এ গজলশিল্পী না ফেরার দেশে চলে যান। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ২০০৩ সালে ভারত সরকারের পদ্মভূষণ খেতাব পাওয়া এই শিল্পী গত চার দশক ধরে উর্দু-হিন্দি-বাংলা ছাড়াও একাধারে পাঞ্জাবি, গুজরাটি, সিন্ধি ও নেপালি ভাষায় গান শুনিয়ে আসছিলেন শ্রোতাদের। তার স্ত্রী চিত্রা সিংও একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। তাকে সঙ্গে নিয়ে জগজিৎ সিং ভারতে গজলের পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করা হয়।

জগজিৎ সিং জন্মেছিলেন রাজস্থানে ১৯৪১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। বাবা অমর সিং এবং মা বচন কাউরের ১১ সন্তানের মধ্যে জগজিৎ ছিলেন তৃতীয়। ছোট একটি সরকারি বাড়িতেই শুরু হয়েছিল ভবিষ্যতের এ গজলসম্রাটের শৈশব। যেখানে না ছিল পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা, না বিদ্যুৎ। তবু ঐ মফস্বলের এক কোণেই বাবার উৎসাহে গানের পথে হাঁটা শুরু হয়েছিল জগজিৎয়ের। বাড়িতে সংগীতের পরিবেশ ছিল।

যখন বাড়ির প্রাথমিক তালিম প্রায় শেষ, সে সময় জামাল খান নামের একজন তাকে বাড়িতে এসে গান শেখাতে শুরু করেন। শিক্ষাজীবন থেকেই তার যাত্রা শুরু। শিক্ষাজীবন থেকেই তার যাত্রা ক্রমশ গজলের সপ্তমাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ছোটখাটো গজলের অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। সংগীত পরিচালকদের কাছে ক্রমশ পরিচিতি মুখ হয়ে উঠছিলেন তিনি। গজলই তাকে খুঁজে দিয়েছিল তার ভালবাসার মানসীকে। এর মাঝেই পরিচয় ঘটেছিল বাঙালি মেয়ে চিত্রা সিংয়ের সঙ্গে। তখন চিত্রা সিং জিঙ্গেল গাইতেন। বিবাহিত চিত্রার স্বামী চালাতেন একটা স্টুডিও। তার সঙ্গে জিঙ্গেল কণ্ঠ দিতে শুরু করেন জগজিৎ। এভাবেই আবেগ ছড়ায় কণ্ঠ থেকে হৃদয়ে। পরস্পরের প্রতি ভালবাসার সংযোগ সেই গজলেই। এই সুরই জগজিৎকে রাজস্থান থেকে টেনে এনে ফেলে বাঙালি চিত্রার শ্যামলিমা ভালবাসায়।

প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ১৯৬৯-এর ডিসেম্বরে জগজিৎ সিংকে বিয়ে করেন চিত্রা। চিত্রার আগের ঘরের মেয়ে মনিকাকে নিয়ে ওয়াডরাউন রোডের ছোট্ট এক রুমের একটি বাড়িতে সংসার শুরু হয় গজল দুনিয়ার জনপ্রিয়তম জুটি জগজিৎ-চিত্রা সিংয়ের। ১৯৭১ সালে জগজিৎ-চিত্রা দম্পতির ঘরে আসে একটি পুত্র সন্তান, যার নাম রেখেছিলেন বিবেক। ১৯৭৬ সাল। ওই বছরই জগজিৎ আর চিত্রা সিংয়ের প্রথম লং প্লেইং রেকর্ড বা এলপি অ্যালবাম ‘আনফরগটেবল’ প্রকাশ হয়।

সঙ্গে চিত্রা সিং

এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জগজিৎ সিংকে। তুমুল ব্যবসা, জনপ্রিয়তা, ছবিতে গান গাওয়ার অফার সব যেন রাজস্থানের উসর জমিতে প্লাবনের ঢলের মতোই নেমে আসে। উপমহাদেশের সংগীতাকাশে মেহেদি হাসান, নূরজাহান, বেগম আখতার এবং তালাত মাহমুদ; যারা ছিলেন জগজিৎয়ের আ-শৈশব স্বপ্নের তারকা, সেই একই আকাশে নক্ষত্র হয়ে জ্বলে ওঠেন তিনি।

ঢাকার মঞ্চে জগজিৎ সিং

প্লেব্যাক করেন প্রেমগীত (১৯৮১), সাথ সাথ, আর্থ (১৯৮২), টিভি সিরিজ মির্জা গালিব (১৯৮৮) এবং কাহকাশান (১৯৯১)। ৫ যুগের এই দীর্ঘ সময়ে জগজিৎয়ের ৮০টি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৯০-এ জগজিৎয়ের একমাত্র পুত্র বিবেক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তখন বিবেকের  বয়স মাত্র ১৯ বছর। এরপরই স্থায়ী এক অন্ধকারের দেওয়াল উঠে যায় এ জুটির জীবনে। এরপরও থেমে থাকেননি জগজিৎ। কিন্তু তার স্ত্রী সুকণ্ঠী চিত্রা পুত্রশোকে গান গাওয়াই ছেড়ে দেন। ১১ বছরের মাথায় জগজিৎ নিজেও উড়াল দেন না ফেরার দেশে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied