নিউজ ডেস্ক: নীলা একটি মহারত্ন। এটি নীল আভাযুক্ত স্বচ্ছ উজ্জ্বল রত্ন। ইংরেজিতে নীলাকে Blue Sapphire বলা হয়। আরবিতে কবুদ বলে। সংস্কৃতিতে নীলকান্তমণিও বলা হয়। এটি হাজার বছর ধরে রহস্য, আধ্যাত্মিক শক্তি এবং গ্রহ-নির্ভর জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। জ্যোতিষশাস্ত্রে শনির অশুভ প্রভাব এড়াতে নীলকান্তমণি পরা হয়। এটি এমন একটি পাথর যা ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত না হলে অথবা ভুলভাবে পরলে দুর্ভাগ্য, বিপর্যয় এবং দুর্দশা ডেকে আনতে পারে। এই কারণেই অনেক মানুষ এর অভিশাপকে ভয় পান। তাই নীলা পাথর ধারণ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক জানতে হবে। তা না হলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক নীলা পাথর কীভাবে পরবেন এবং কাদের জন্য পরা উচিত-
নীলা পাথর কি?
নীলা একটি মূল্যবান রত্ন। এই রত্নটি অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড স্যাফায়ারের উপাদানে সৃষ্টি হয়। নীলা মূলত নীল রঙের হলেও এটি অনেক রঙের হয়ে থাকে। অপরাজিতা ফুলের মতো নীলাভ, রক্তাভ বা গোলাপি আভাযুক্ত, পীতাভ আভাযুক্ত, নানা মিশ্রিত বর্ণের হয়ে থাকে। বর্ণ অনুসারে ইন্দ্রনীলা, অপরাজিতা নীলা ইত্যাদি বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। প্রধানত শ্রীলঙ্কা, ভারত, মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।

নীলা পাথরের কী কাজ করে
>> জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, নীলা হলো শনি গ্রহের প্রতিনিধিত্বকারী রত্ন। তাই এটি শনির খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং ইতিবাচক প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। বৃষ, মিথুন, কন্যা, তুলা, মকর এবং কুম্ভ রাশির জাতক-জাতিকারা নীলকান্তমণি ধারণ করতে পারেন।
>> নীলা পাথর খুব দ্রুত কাজ করে। পরার পর এর প্রভাব সাধারণত ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনুভব করা যায়। এটি পরলে জীবনে শনির ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে।
>> নীলা পাথর পরার নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করলে সম্পদ বৃদ্ধি, সৌভাগ্য, সুযোগ আসে। এই পাথর ব্যবহারে খারাপ দৃষ্টি এবং শত্রুতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য,সুনাম বাড়াতে নীলা পাথর বেশ উপকারী।
>> নীলা পাথর আর্থিক উন্নতি ঘটিয়ে আত্মবিশ্বাস ও মনঃসংযোগ বাড়িয়ে তোলে। যারা কঠোর পরিশ্রম করেও ফল পাচ্ছেন না, তাদের জীবনে নীলা পাথর পরিবর্তন আনতে পারে।
>> শারীরিক অসুস্থতা, বিশেষ করে হাড়, স্নায়ু বা বাতজাতীয় রোগের ক্ষেত্রে উপকার করে।
>> বিচার সংক্রান্ত সমস্যা, মামলা-মোকদ্দমা বা সরকারি যেকোনো জটিলতায় সাহায্য করে।
কীভাবে পরবেন
নীলা সাধারণত আংটির মাধ্যমে ধারণ করা হয়। পুরুষদের ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে পরা হয়, নারীদের উভয় হাতের মধ্যমা আঙুলে পরা যেতে পারে। তবে কর্মজীবী নারীরা ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে পরলে ভালো। রুপা, স্বর্ণ অথবা পঞ্চ ধাতু মাধ্যমেও নীলা পাথরের আংটি ধারণ করা করতে পারেন। নীলা পাথরটি কমপক্ষে ৫ ক্যারেট হতে হয় এবং স্বচ্ছ ও দাগহীন হওয়া জরুরি। এটি লকেট হিসেবে পরতে পারেন। ব্রেসলেট হিসেবে পরতে পছন্দ করলে বাম হাতে পরতে পারেন।

নীলা পাথর কারা পরতে পারবেন?
>> নীলা পাথর কারা পরবেন, তা নির্ভর করে জন্মছক অনুযায়ী শনির অবস্থানের ওপর। মানে রাশি অনুযায়ী যাদের শনি অনুকূল, তারাই পরবেন।
>> জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, বৃষ, মিথুন, কন্যা, তুলা, মকর এবং কুম্ভ রাশির জাতক-জাতিকারা নীলকান্তমণি ধারণ করতে পারেন। তবে মেষ, বৃশ্চিক, কর্কট, সিংহ রাশির জাতক-জাতিকাদের নীলা পরা এড়িয়ে চলা উচিত।
পরার আগে যে বিষয় মেনে চলতে হয়
>> শনিবার, সূর্যোদয়ের আগে পরা উচিত। আংটি ধারণের আগে শুদ্ধ পানির সঙ্গে কাঁচা দুধ ও গঙ্গার পানি মিশিয়ে পাথরটি শুদ্ধ করে নিতে হয়।
>> নীলা পাথর পরার আগে ত্রয়োদশী বা অমাবস্যা তিথিতে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সময় হাতে ধরে থাকা উচিত। এতে বোঝা যাবে এটি আপনার জন্য অনুকূল কি না।
অবশ্যই জ্যোতিষ্কের পরামর্শ নিয়ে এই পাথর পরতে হবে। ভুল ভাবে পরলে গুরুতর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস