তাকে একটু দেখতে বা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেননি। যে মানুষটি ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে নিজের মুল্যবান জীবন বাজি রেখে অস্ত্র কাধে নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো বেসে ৭ নং সেক্টরের অধিনে মেজর শাহারিয়ারের নেতৃত্বে দ্বীর্ঘ ৯ মাস ধরে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন একটি স্বাধীন দেশ ও লাল সবুজের পতাকা, আজ সেই বীর যোদ্ধা নিজের জীবন ও দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে হেরে যেতে বসেছেন।
কাল হয়ে দেখা দিয়েছে মরন ব্যাধি, অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দ্বীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুকছে তিনি। কোন মতে সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের কাজ থেকে সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে গত ৩ মে শুক্রবার হঠাৎ গুরুত্বর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসহায় স্ত্রী সন্তানেরা দিশকুল না পেয়ে অতি কষ্টে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।
ডাক্তার দেখার পর জানতে পারেন তার শরীরে স্থায়ী পেসমেকার স্থাপন করতে হবে। যা করতে গেলে লাগবে লক্ষ লক্ষ টাকা। ডাক্তারের একথা শুনার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা নজিম ও তার পরিবারের লোকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী সন্তানেরা দিশেহারা হয়ে হাউমাউ করে কেদে ফেলেন।
শুরু করেন এই যোদ্ধাকে বাচানোর আপ্রান চেষ্টা, এর কাছে অর কাছে ছুটতে ছুটতে এক সময় যান থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে। সন্তান নজরুল তার বাবাকে বাচানোর জন্য থানা কমান্ডারকে না পেয়ে ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিক হোসেনের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানালে ডেপুটি কমান্ডার দিনাজপুর জেলা কমান্ডারকে দেখিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেন।
গত ২/৩ দিন ধরে ঘুরে তাকেও না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েন। এদিকে দিমেক হাসপাতালের ডাক্তার শাহারিয়ার কবির রুগীর অবস্থা দেখে বলেছেন অতি তাড়াতাড়ী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার শরীরে স্থায়ী পেসমেকার স্থাপন না করতে পারলে হয়তো তাকে বাচানো যাবেনা।
গত ১০ মে শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে এ প্রতিনিধি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজিম উদ্দীন শাহ এর সাথে দেখা করতে গেলে হাসপাতালের বেডে মুমুর্ষ অবস্থায় শুয়ে থাকা নজীম সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে অঝর ধারায় কাদতে কাদতে বলেন, আমি বাচতে চাই, আমাকে আপনারা বাচান, কিন্তু ডাক্তারের কাছে যা শুনেছি তাতেতো ভালো হতে গেলে অনেক টাকার দরকার।
আমি গরীব মানুষ, পরিবার নিয়ে তিন বেলা পেট পুরে খেতে পাইনা, এই টাকা পাব কোথায়। তাই মরন ছাড়া আর বুঝি কোন উপায় নাই। তিনি আক্ষেপের শুরে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসিন। আর আমি এক জন মুক্তিযোদ্ধা, আমার গেজেট নং-(০৬০১০৮০০১৭) এর পরেও আমাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে, ভাবতে অবাক লাগে। আমি বেচে থাকতেই যখন অর্থের অভাবে সুষ্ঠ চিকিৎসা পাবনা, তখন মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার কি দরকার।
এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল তার বাবাকে বাচানোর আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি দেশের প্রধান মন্ত্রী সহ স্ব-হৃদয় বান অর্থ শালী ব্যাক্তিদের কাছে দোয়া ও আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। তার মোবাইল নং- ০১৭৬১৩৭৩৭৫৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুলের বাড়ী দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার শালবাড়ী গ্রামের শাহা পাড়ায়।