আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৪ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সরকার বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করায় আন্দোলনে জামায়াত

রংপুরে জামায়াতের সেক্রেটারি
সরকার বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করায় আন্দোলনে জামায়াত

ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

চীনের চুড়ান্ত পদক্ষেপ
ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

বাস্তবায়ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা
“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

অতিভারি বৃষ্টি ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি,নদীর দিক পরিবর্তনে ভাঙ্গন শুরু

শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিকাল ০৫:১০

Advertisement

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ অতিভারি বৃস্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে তিস্তা নদীর দিক পরিবর্তনে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি এলাকায় তিস্তা নদীর ডানতীর প্রধান বাঁধ ও এক নম্বর স্পার বাধ হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, ভারতের পূর্ব উত্তর প্রদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বিহার পর্যন্ত একটি ঘূর্ণাবর্তের অবস্থান উত্তরবঙ্গের আকাশে বিপুল পরিমাণ জলীয়বাষ্পের আগমন ঘটিয়েছে। আর এরই ফলস্বরূপ বৃহস্পতিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, নীলফামারী সহ ভারতের বিভিন্ন জেলায় অতিভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাতভর বৃষ্টির মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের পঞ্চগড় ও ভারতের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার। সকাল থেকেও আকাশ মেঘে ঢাকা। সকাল ৯টার পর বৃষ্টিতে ভিজছে বিভিন্ন এলাকা।

এদিকে অতিভারি বৃস্টির জেরে উজারে ঢলে তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে ও দিক পরিবর্তনে নীলফামারীর ডিমলার ঝুনাগাছচাঁপানী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি নামক স্থানে ডানতীর প্রধান বাঁধ ও ১৪০ ফিট দীর্ঘ একটি স্পার বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেখানে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে ভাঙ্গন রোধে জরুরী কাজ করছে। সচেতন মহল বলছেন অতিভারি বৃস্টির দুর্যোগ ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

নীলফামারী ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুর্বাভাস সর্তকীকরন কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার (৫২.১৫) দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। যা বেলা ১২টায় দশমিক ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার (৫২.০২) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা তিনটায় পুনরায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তিনি জানান, তবে খবর পাওয়া গেছে উজানের ভারতের তিস্তা নদীর সীমান্ত মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বেলা ২টায় বিপৎসীমার (৬৫.৯৫) দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইচগেট খুলে রাখা হয়েছে। 

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী,দিনাজপুর,রংপুর সহ বিভিন্ন স্থানে অতিভারি বৃস্টি শুরু হয়। তবে সকাল ৯টার পূর্ব পর্যন্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২০২ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২৭ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ৩ মিলিমিটার, রংপুরে ২ মিলিমিটার, নীলফামারীর ডালিয়ায় ১৪ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সকাল সারে ১১টার পর বৃস্টিপাতের রেস অনেকটা কমেছে বলে তিনি জানান।

এদিকে অতিভারি বৃস্টি ও উজানের তীব্র স্রোতে তিস্তা নদী দিক পরিবর্তন হওয়ায় জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নে ভেন্ডাবাড়ি নামক স্থানে এক নম্বর স্পার বাঁধে ধ্বস নেমেছে। সেখানকার ডানতীরে প্রধান বাঁধটিঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেখানে ভোর ৫টা থেকে ভাঙ্গনরোধে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের  কর্মকর্তা, এলাকার শ্রমিক ও জরুরীভিত্তিতে ঠিকাদার জিও ব্যাগ, জিও টিউব, বাঁশ ও গাছের গুড়ির পাইলিং করে ভাঙ্গনরোধের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারনে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ্য তিস্তা ব্যারেজের ভাটি এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতি নিয়ম নদী ডান তীরে সরে আসছে। এতে ওই বাধ বিধ্বস্থ হলে তিস্তা নদী মূল প্রবাহের গতিপথ ছেড়ে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাঁপানী, জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন ও জলঢাকা শহর ছুঁয়ে প্রবাহিত পারে বলে ওই এলাকার বসবাসকৃত মানুষজন শঙ্কায় রয়েছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরুতে তিন দফা পানি বৃদ্ধির পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। ফলে পানির স্তর বাড়া-কমার মধ্যে থাকায় চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীণ হতে হচ্ছে ওই এলাকার বসবাসরতদের।

ঝুনাগাছ চাপানীর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, বারবার বন্যায় ধান, পাট, মাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া মুক্তি নেই।

ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, তিস্তা নদীর পানি গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সব থেকে বেশি আতঙ্কে রয়েছে ডানতীরের মানুষ। যদি বড় ধরণের বন্যা আসে তাহলে এক নিমিষে এই গ্রাম ভেসে নিয়ে যাবে। তিনি জানান, রাতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ভেন্ডাবাড়ি ডান তীরে ভাঙ্গন শুরু হয়। সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে। এতে স্থানীরাও সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, সেখানে ১৪০ ফিট দীর্ঘ এক নম্বর স্পার বাঁধ ও ডান তীর প্রধান বাধ ঝুকির মধ্যে পড়েছে। হঠাৎ করে এখানে তিস্তা নদী ডান তীরে দিক পরিবর্তন করে সরে এসেছে। তিনি আরও জানান, নদীর তীব্র স্রোত আঘাত করছে এখানে। বৃস্টির মাঝেই  অসংখ্য শ্রমিক নিযুক্ত করে দ্রুত ভাঙ্গন মোকাবেলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অতিভারি বৃস্টিপাতে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির কারনে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠেছে। 

মন্তব্য করুন


Link copied