আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ১০ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘নভেম্বর থেকে চার মাসের জন্য খুলবে সেন্টমার্টিন’

‘নভেম্বর থেকে চার মাসের জন্য খুলবে সেন্টমার্টিন’

বাংলাদেশ-কসোভো সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান

বাংলাদেশ-কসোভো সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান

রংপুরে সেই বাগছাস নেতার পদ স্থগিত

শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থী পেটানো
রংপুরে সেই বাগছাস নেতার পদ স্থগিত

মুন্সীগঞ্জে বাসচাপায় মাদ্রাসা ছাত্রী নিহত, বাসে আগুন বিক্ষুব্ধ জনতার

মুন্সীগঞ্জে বাসচাপায় মাদ্রাসা ছাত্রী নিহত, বাসে আগুন বিক্ষুব্ধ জনতার

অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে সৈয়দপুরে লায়ন্স স্কুলের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ০৮:৩৩

Advertisement

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে শহরের বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেয়। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এসময় তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সফিয়ার রহমান ও লায়ন্স ক্লাবের সভাপতির পদত্যাগের দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। অবরোধ চলাকালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারপরেও শিক্ষার্থীরা ছিলেন অনড়। তারা সড়কে বেঞ্চে ও সড়কে বসে সভাপতি সফিয়ার রহমানের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। বিকাল ৪টায় সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ও শিক্ষকদের অনুরোধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ তুলে নেয়।

অবরোধে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, “আমাদের শিক্ষকদের লাঞ্চিত করা এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের পাশে আছি বলে জানান তাঁরা।” নিলয়, লাবু, আরিফ ও লাবিব সহ অনেক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, “বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠ দান হয় না। দুইটি ক্লাস হওয়ার পর পাঁচ ঘন্টা আলস সময় কাটাতে হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ নানা অজুহাতে ফি বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে। এমনকি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বিনা কারণে লাঞ্চিত করা হলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না।”

অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, “বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা নয় বরং আর্থিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই এই আন্দোলন যৌতিক।”

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, “প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত ও প্রতিকারের দাবিতে তারা ১৬ দফা অভিযোগ নীলফামারী জেলা প্রশাসক ও সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পেশ করা হয়েছে। পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়ম বর্হিভূত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন দুর্ণীতি করছেন। এছাড়া স্কুলের সভাপতি মশিয়ার রহমান প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তহবিল থেকে তিন কোটি টাকার অনিয়ম-দূর্নীতি করেছে।” শিক্ষকদের আন্দোলনে কোমলতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামালেন কেন? এরুপ প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষকরা জানান, আমাদের ন্যায় সংগত দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রতিবাদে নেমেছে। প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো বলে উল্লেখ করেন তারা। পরে শিক্ষকদের অনুরোধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচলা স্বাভাবিক হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র শিক্ষক মাসুদা জাহান, ফরিদা আক্তার ও সুফিয়া বানু বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ড্রেস কোটসহ নানা নিয়ম পালন করতে হয়। তবে দীর্ঘ চাকরী জীবনে কোন বোনাস নেই। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে এক হাজার হতে আড়াই হাজার টাকা বেতন নেয়া হয়। বিশাল এই বেতনের টাকা তারাই বাটোয়ারায় ভোগ করেন।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ফোরামে সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র শিক্ষক মো: রবিউল ইসলাম জানান, এখানে কখনই পুর্ণ অধ্যক্ষ দেওয়া হয় না। ভারপ্রাপ্ত দ্বারাই যুগের পর যুগ চলছে। সরকারি বিধি মতে নেই ইনক্রিমেন্ট, অবসরের পর কোন সরকারী বিধি মতে এককালীন অর্থ দেওয়া হয় না, স্কুলের যানবাহন ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহার করা হয়। এসএসসি ফলাফল খারাপ হলে শিক্ষকের বেতন কর্তণ, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন লায়ন্স ক্লাবে ব্যাবহার সহ নানান অনিয়ম চলছে প্রতিষ্ঠানে।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ফোরামের সভাপতি সিনিয়র শিক্ষক মজিবর রহমান মুকুল বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানে সবকিছুতেই স্বজনপ্রীতি। নিযোগ ও আর্থিক লেনদেনের মতো অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরেই চললেও কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয না। তাই কোন ভাবে আর অনিয়ম দূর্ণীতি মানা হবে না। এসবের দ্রুত সমাধাণ চাই আমরা।”

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান জানান, “অনিয়মের বিষয়টি লায়ন্স ক্লাব দেখবেন। এটা আমি জানি না।”

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সফিয়ার রহমান জানান, “শিক্ষকদের দাবী দাওয়া থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে যানজট দুর্ভোগ সৃষ্টি করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?” তিনি বলেন, “মূলত এবার এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করায় এবং যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ফেল করে সেসব বিষয়ের শিক্ষকদের কারণ জানতে তলব করা হয়। আমরা জানতে পারি, স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাসের চেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট আর কোচিংয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন। সকল শিক্ষার্থী তো আর প্রাইভেট কোচিং করে না। ফলে আমরা অভিযুক্ত সেসব শিক্ষকদের সাময়িক সময়ের জন্য হাউজরেন্ট স্থগিত করি। যদিও পরে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তা আবারও চালু করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকদের শোকজ দেওয়া হয় এ কারনে ওইসব শিক্ষকরা এখন ষড়যন্ত্র ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে এখন মব তৈরির পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

এদিকে প্রতিষ্ঠানের হলরুমে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ ও সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ সহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে জরুরী বৈঠক চলে (এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা)। 

মন্তব্য করুন


Link copied