ডেস্ক: অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয় পার্টির দুর্গ রংপুর অঞ্চল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ভূমিকা, ব্যক্তিস্বার্থ, নীতি-নৈতিকতা এবং সাংগঠনিক দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। খোদ দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
একাধিক নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরোধে টানাপড়নেও রংপুরের নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের পক্ষে ছিল। তিনি হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীদের মধ্যমণি। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই ছিল সকলের আস্থা। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাপা অংশ নেবে কিনা, এ নিয়ে সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সকলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে অংশ না নেয়ার পক্ষে মত দেয়। এরপরও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যায়। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ২৬ আসনে ছাড় পেলেও আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে কোনোভাবে ১১ আসন পেয়ে বাকি আসনগুলোতে জামানত হারায়। তাদের কারণে রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে একে-একে পাঁচটি আসন আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়।
শুধুমাত্র রংপুর-৩ (সদর) আসনে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের কোনোভাবে জয়ী হন। অথচ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ২২টি আসনের মধ্যে ২১টি ছিল জাতীয় পার্টির দখলে। তৎকালীন সময়ে রংপুর টিকিয়ে রেখেছিল জাতীয় পার্টির রাজনীতি। কিন্তু এ রাজনীতি দলের কতিপয় নেতা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে দলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
রংপুরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট ফারুক বলেন, নির্বাচনের পূর্বে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের দেশের রিজার্ভ ফান্ডের অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেছিলেন সকলের অজান্তে দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে, যা পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। অথচ তিনি জানেন না, তার এই নীতি নৈতিকতার কারণে জাতীয় পার্টির অজান্তেই দল শেষ প্রান্তে।
শ্রমজীবী লাভলু বলেন, দেশের এ পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে জাতীয় পার্টি বেশি দায়ী। তারা আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, অনিয়মের সমর্থন না দিলে দেশ বাঁচতো। এখন এর ভবিষ্যৎ কোথায় আল্লাহই জানেন।
ব্যবসায়ী মামুন বলেন, নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেতা তুষার কান্তি মণ্ডল বলেছিলেন, তিনি নির্বাচন করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিএম কাদেরকে পরাজিত করবেন। যা পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু জিএম কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তেমন কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকলেও তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী একাই জিএম কাদেরকে দৌড়ের ওপর রেখেছিল। এখন রংপুরের মানুষ মন থেকে জাতীয় পার্টিকে মুছে ফেলেছে। আগামীতে হয়তো এ আসনও জাপা হারিয়ে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
জাপা সমর্থক শামীম বলেন, এবারের নির্বাচনে জিএম কাদের জয়ী হলেও, এ জয় সম্মানজনক হয়নি।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টিকে চাপে রেখে নির্বাচনে নেয়া হয়। এর জন্য দায়ী কে! এটা আমাদের বুঝতে হবে। দল চালাতে গেলে শক্ত অবস্থানে থাকতে হয়। সকলের ঊর্ধ্বে দলের কথা ভাবতে হয়।