আর্কাইভ  শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ● ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫       আহতরা যেই দলেরই হোক, চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী       ২৭শে জুলাই রংপুর বিভাগের আট জেলায় কারফিউ শিথিল       সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান বেরোবি প্রশাসনের       "শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে"      

 width=
 

আওয়ামী লীগ যাদের প্রতি নমনীয়, জাপা জোটে তারা

বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট ২০২২, সকাল ০৮:৪৪

ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতি নমনীয়, তাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এসব রাজনৈতিক দলের বিএনপির দিকে যাওয়া ঠেকানো এবং বিএনপি জোটের বিকল্প তৈরিতে এই উদ্যোগে সরকারের 'সমর্থন' রয়েছে। যদিও জাপা নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখা দলগুলো নিয়েই জোট হবে।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাওলানা মুহম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, জামায়াতে ইসলামী ছেড়ে আসা নেতাদের দল এবি পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জির খেলাফত আন্দোলনকে নিয়ে জোট হতে পারে।

এ দলগুলোর নেতারাও জাপার সঙ্গে আলোচনার সত্যতা এবং নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছেন। এবি পার্টি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে জাপার। দিনক্ষণ ঠিক হয়েও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক হয়নি।

আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতিসহ সাত দল গণতন্ত্র মঞ্চ নামে জোট করেছে।

জাপা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপি-ঘেঁষা। তাদের সঙ্গে জোট হবে না জাপার। যে দলগুলোর প্রতি সরকার নমনীয়, সেগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আলোচনাও চলছে। সরকারের সুরে কথা বলে 'গৃহপালিত বিরোধী দলের' তকমা পাওয়া জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর।

আগের তিনবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোট করা জাপার ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নির্বাচন ব্যবস্থা, মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সমালোচনা করলেও সরকারের মূলনীতির সঙ্গে জাতীয় পার্টি রয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনীতির বড় বদল না হলে আগামী নির্বাচনেও জাপা আওয়ামী লীগের সহযোগীর ভূমিকায় থাকবে। বিএনপি ভোটে না এলে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো জাপা সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করবে। বিএনপির জোট না এলে জাপার জোট বিকল্প হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় ফল করে বিএনপির প্রায় চার গুণ আসন পেয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয় জাপা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অঘোষিত শরিক ছিল। দলটিকে ২৫টি আসন ছাড়ে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাপা ৩৪ আসন পেয়ে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল হয়।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিলেও ওই ভোটকে বিএনপির মতো সমালোচনা করে দলটি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ১৩ বছরে অনেকটা বিনা বাধায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে ইসলামী আন্দোলন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়ে আলোচনায় আসা এ দলটির সঙ্গে সরকারের 'সম্পর্কের' কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। ইসলামী আন্দোলনের ওয়াজ মাহফিলে আওয়ামী লীগের এমপি-নেতারা অতিথি হন। দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সম্প্রতি একই মঞ্চে ওঠেন আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আগা খান মিন্টু। বিএনপি সম্প্রতি প্রায় সব বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও চরমোনাইয়ের পীরের দলের সঙ্গে বৈঠক হয়নি।

২০০১ সালে নির্বাচনে জাপার সঙ্গে জোট করে ভোট করে ইসলামী আন্দোলন (তখন নাম ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন)। আবারও জোট হবে কিনা- এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাতীয় পার্টি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় পার্টির নৈকট্য রয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি।

জাপার সঙ্গে আলোচনা হবে তা স্বীকার করেছেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন ইসলামী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় চলছে। খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জাপার সঙ্গে এখনও বসা হয়নি। সময়-সুযোগ অনুযায়ী সবার সঙ্গেই বসব। জাপার সঙ্গে জোট হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন শুধু মতবিনিময় চলছে। পরিবেশ অনুকূল হলে দেখা যাবে, জোট হবে কিনা?

গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদিকে অতিথি করার প্রতিবাদে হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতা হলে সংগঠনটির নেতারা গ্রেপ্তার হন। সে সময়ে হেফাজতের পক্ষে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালান খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জি। তিনি কারওয়ান বাজারের বাকুশা জামে মসজিদের খতিব। এ মসজিদের সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকগুলোয় তিনি অংশ নেন। ধর্মীয় ইস্যুতে সরব থাকলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেই খেলাফত আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলন জাপার জোটে এলে এ দলটিও আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত নির্বাচনের আগে ৫৮ দলের ঢাউস জোট করেন জাপার তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শরিক হয়েছিল দুই নিবন্ধিত দল ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস। আওয়ামী লীগ জাপাকে ছাড় দিলেও এ দলগুলো আসন ছাড়েনি। আসন না পেয়ে জোট ছাড়ে দলগুলো। ইসলামী ফ্রন্টকে ফেরানোর কথা জানিয়েছে জাপা সূত্র। চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আগের জোটের সবাই ফিরতে চাচ্ছে। তবে নামসর্বস্ব দলগুলোকে নিয়ে জোট করে লাভ নেই। শুধু ইসলামী ফ্রন্টকে ফেরানো হবে। চট্টগ্রামের কয়েকটি আসনে দলটির ভোট রয়েছে। তিনি জানান, ভোট ব্যাংক আছে এবং যে দলগুলোর সরকারের কট্টর বিরোধী নয়, সেগুলোকে নিয়েই জোট হবে।
মাওলানা ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের সিলেট অঞ্চলে কিছু ভোট রয়েছে। দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের হেফাজতের সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হন। খেলাফত ঘোষণা দিয়ে বিএনপি জোট ছাড়ার পর দলের মহাসচিব জামিনে মুক্তি পান। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেয় খেলাফত। নির্বাচন কমিশন গঠনেও নাম প্রস্তাব করে।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দিনক্ষণ ঠিক হলেও দলটির সঙ্গে বৈঠক হয়নি। পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে আলোচনা হবে। তবে ড. কাদের তথ্যের সত্যতা নাকচ করেছেন। তিনি দাবি করেন, জাপার সঙ্গে আলোচনা হয়নি।

একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানিয়ে বছর তিনেক আগে জামায়াত থেকে বহিস্কার হন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু। সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী একই অবস্থান নিয়ে জামায়াতের মজলিশে শূরা থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও। জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা নেতাকর্মীদের নিয়ে তাঁরা এবি পার্টি গঠন করেন।

জামায়াত গত ১১ বছরে বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও এবি পার্টি পারছে। গত শুক্রবারও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টন, প্রেস ক্লাব এলাকায় মিছিল সমাবেশ করেছে। দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জাপার সঙ্গে মতবিনিয়ম হয়েছে। জোট হয়নি। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। বিএনপি অন্যান্য দলের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও জামায়াতের চাপে এবি পার্টির সঙ্গে বসেনি। জাপার সঙ্গে জোট হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন অগ্রাধিকার নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন। ভোটের আগে ঠিক হবে, জোট হবে কিনা?

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক হয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে। ভোটের পর বিএনপির সমালোচনা করে জোট ছাড়েন কাদের সিদ্দিকী। সরকারের সমালোচনা করলেও বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব মেটেনি তাঁর দলের। গত মঙ্গলবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন বঙ্গবীর। জাপা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে কাদের সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে 'সমদূরত্ব' রাখা দলগুলোকে একজোট করার কথা বলেন।

জাপা মহাসচিব সমকালকে বলেছেন, কীভাবে তা করা যেতে পারে, কীভাবে রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের এখনও ১৫-১৬ মাস বাকি। আগাম নির্বাচনেরও সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনী জোট হবে কিনা তা অনেক পরের ব্যাপার।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে দলটির 'বি টিম' হিসেবে পরিচিত জাপার সঙ্গে জোট করে রাজনীতিতে ভারসাম্য আনা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে কৃষক শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বলেছেন, জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে অস্পষ্টতা তো রয়েছেই। তা স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করা এই নেতা বলেন, দুই দলের বাইরে যারা, তাদের জোট হতে পারে। খবর দৈনিক সমকাল

মন্তব্য করুন


 

Link copied