আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

আত্নহত্যা কোন সমাধান নয়, বেঁচে থাকার নামই সফলতা

বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১, দুপুর ১১:৩১

মো. শহিদুল ইসলাম

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায়ই মানুষের আত্মহত্যার সংবাদ পাই। মাঝে মাঝে নীরবে ভাবি, মানুষ আত্মহত্যা করে কেন? সম্ভবত সৃষ্টির একমাত্র প্রাণী মানুষ, যারা আত্মহত্যা করে। জীবনটাকে এতটাই তুচ্ছ বা মূল্যহীন মনে হয় তাদের!

একবার ভাবুন তো, আপনি আত্মহত্যা করলেন; আর এই পৃথিবীতে আপনার অসুস্থ পিতা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। আপনার মা সংসারে অভাবের তাড়নায় শতছেঁড়া বস্ত্র পরিধান করে মানুষের বাসায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন শুধু দু'বেলা কিছু খাবার জোগানোর জন্যে। আপনার বিবাহ উপযুক্ত বোনটি কেঁদে কেঁদে দিন-রাত অতিবাহিত করছে; দুশ্চিন্তায় দু'চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে, কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না। অতি আদরের ছোট্র ভাইটি অর্থকষ্টে পঞ্চম শ্রেণীতেই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে হোটেলে কাজ করছে। আত্মহত্যা শুধুই আত্মহত্যা নয় এটি একটি পরিবারকে হত্যা করা, একটি জাতিকে হত্যা করার শামিল। মানুষের জীবন সীমাহীন মূল্যবান সম্পদ। এটি বারবার ফিরে আসে না। পৃথিবীর সামান্য কিছু না পাওয়া, সামান্য একটু ব্যর্থতা, সামান্য একটু অবহেলা, অবজ্ঞা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। আমরা হয়তো জীবনে সফলতার সংজ্ঞাই বুঝি না, তাই আমরা অতি অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ি। জীবনে সফলতা বলতে আসলে কী বোঝায়? সেটা আগে জানা দরকার। আমি অনেক ভেবে সফলতার একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছি। সেটি হল, আপনি যে অবস্থায়ই পৃথিবীতে বেঁচে আছেন বা টিকে আছেন সেটিই সফলতা। আরো নিদির্ষ্ট করে বলি; কেবল নির্দিষ্ট কোনো কিছু অর্জন করতে পারাকে সফলতা বলা মোটেই ঠিক নয়। এরূপ হলে একজন মানুষ তার সারাজীবনেও সফল হতে পারবে না। কারণ, মানুষের চাহিদা অসীম। জীবনে একটার পর একটা ধাপ বা পর্যায় আসতেই থাকবে। কাজেই সমস্যা তখনই তৈরি হয়, যখন আমরা কেবল নির্দিষ্ট কোন বিষয়কে, পর্যায়কে বা ধাপকে সফলতা হিসেবে মনে করি। চাকরি না পাওয়া, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, পরীক্ষায় পাশ করতে না পারা, অপমানিত হওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি, কোনকিছু হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কারণ বা ঘটনা জীবনে আসতে পারে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পৃথিবী বৈচিত্র্যময়, এখানকার সবকিছুই অনেক বৈচিত্র্যময় হবে এটিই স্বাভাবিক। এই বৈচিত্রময়তার মাঝে সৎভাবে বেঁচে থাকাই হল সফলতা এবং এটিই জীবনের পূর্ণতা।

জীবন কখনোই থমকে থাকে না। জীবনে আসলে ব্যর্থতা বলতেও কিছু নেই। সবকিছু স্বাভাবিক হতে বা ঠিকঠাক চলার জন্য শুধু প্রয়োজন একটু অপেক্ষার। পৃথিবীতে অসংখ্য ধনীমানুষ আছেন, যাদের প্রাথমিক জীবন খুবই অর্থকষ্টে কেটেছে। অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আছেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আছেন, যারা প্রাথমিক জীবনে পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিলেন না। অপরদিকে পৃথিবীতে অনেক ধনী মানুষ ছিলেন, যারা পরবর্তী জীবন অনেক কষ্টে কাটিয়েছেন। অনেকেই অনেক ভালো ছাত্র ছিলেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে পড়ালেখাই চালিয়ে যেতে পারেননি। জীবনকে সীমাবদ্ধ স্কেলে পরিমাপ করা মোটেই ঠিক নয়।

আজকে যে ছেলেটা বা মেয়েটা লজ্জায় ঘরের দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকে। কিছুদিন পরেই সেই হয়তো পৃথিবী বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার এ পরিণত হবে। আজকে যে বা যারা একটা মুরগি জবাইয়ের দৃশ্য দেখলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তারাই একদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপারেশন থিয়েটারে কাটিয়ে অগণিত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলবে-এটিই বাস্তবতা। যে শিক্ষার্থী ১ এর সাথে ১ যোগ করলে কত হবে, সেটি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে; সেই একদিন পৃথিবীর সেরা প্রকৌশলী হতে পারে। এভাবে আরো অনেক কিছুই বলা যায়। সব কথার সারমর্ম হল, জীবনকে জীবনের মতো চলতে দেয়া। জীবনটা শুধুই নিজের জন্য না ভাবা। বরং পরিবার, সমাজ ও জাতি সবার জন্য ভাবতে শিখতে হবে। মনে রাখা উচিত, জন্মের পরপরই কিন্তু কোনো একজন মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে না। খুব ছোটতে মানুষ একা খেতে পারে না, একা হাঁটতে পারে না, নিজের ভালো-মন্দ কিছুই বোঝে না। বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার ও অন্যান্য মানুষের সহায়তায় একজন মানুষ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, বুঝতে শেখে এবং একসময় পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। সেই মানুষটা তাহলে কেন আত্মহত্যা করবে? এই যে বাবা-মা, পরিবার, সমাজের মানুষ অনেক সাধনায় তাকে পূর্ণ একজন মানুষে পরিণত করলো, তাদের কি কোন মূল্যই নেই তার কাছে? আমরা আসলে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে চাই। আমরা অতি অল্পতেই ভেঙে পড়ি। মনে রাখা উচিত, আমরা খুব হতাশ হয়ে যখন দশ টাকা দামের সিগারেট টানি, পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যাদের একটু খাবারের জন্য, পানির জন্য, ওষুধের জন্য এই দশটি টাকাই অনেক কিছু। আমরা যখন ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য শত শত টাকা খরচ করে মদের নেশায় আসক্ত, তখন এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ আছেন যাদের একশত টাকা হলে দুই বেলা খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। অতি কষ্টেও তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন না। জীবনকে ধ্বংস করে ফেলেন না। তারা টিকে আছেন এবং টিকে থাকেন। সুতরাং আপনি কেন নিজেকে ধ্বংস করে দিবেন? সৃষ্টিকর্তা মহামূল্যবান জীবন দান করে আমাদেরকে সুন্দর এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমরা কেন সেই জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করব? কেউ জানে না, ভবিষ্যতে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে। আমাদেরকে বাস্তববাদী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজের জীবনকে শেষ করে দিলে কোনো সমাধান আসবে না। বরং আপনি না থাকলে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন এবং আপনার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের জীবন হয়ে পড়বে ভয়াবহ দুর্বিষহ। তারা অর্থকষ্টে ভুগবে, ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট পাবে, বিনা চিকিৎসায় বিছানায় কাতরাবে। তাদের জন্য বেঁচে থাকাটাও কিন্ত জীবনে মহান সফলতা। একবার ভাবুনতো আদরের ছোট ভাই বা বোনটির কথা, অনেক আদরের ফুটফুটে সন্তানদের কথা। আপনি নেই জন্য হয়তো সে/ তারা শুকনো মুখে একটু খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! পরিশেষে বলবো, পৃথিবীর ছোট্ট এই জীবনে পাওয়া না পাওয়াতে আসলে তেমন কিছুই আসে যায় না। উত্থান-পতন, জয়-পরাজয় এসব কিছুর সমষ্টিই হল- জীবন। সুতরাং সেই জীবনকে আমরা কোনভাবেই বিনষ্ট করতে পারি না। আত্মহত্যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং এটি কোন সমাধানও নয়।

পৃথিবীর কোনকিছুই ধ্রুব নয়। সবকিছুই প্রতিনিয়ত বদলায়, বদলে যায় সমাজ, মানুষ আর মানুষের জীবনও। সবকিছু ঠিক হওয়ার জন্য দরকার শুধু একটু ধৈর্যের, হ্যাঁ শুধুই একটু ধৈর্যের। স্বল্প সময়ের শিক্ষকতার এই জীবনেই দেখেছি, ক্লাস টেস্টে বারবার ফেল করা ছেলেটিকে বিসিএসে ভালো ক্যাডার পেতে, আর্মি অফিসার হতে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে, দেশে-বিদেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। মায়ের নিঃষ্পাপ মুখখানির দিকে তাকান, বাবার ঘামে ভেজা কপালের দিকে তাকান, সন্তানের মায়াভরা কচি মুখের প্রতি তাকান। আপনাকে হারিয়ে তাদের কষ্টের সীমা থাকবে না। বিশ্বাস করুন, নিজ পরিবারকে নিয়ে বেঁচে থাকার মত সফলতা আর দ্বিতীয়টি নেই।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখুন, বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। নিজেকে কখনো মূল্যহীন ভাববেন না। শুধু একটু অপেক্ষা করুন, ভোরের সোনালী রোদের ন্যায় আপনি আলোকিত হবেনই হবেন।

লেখক: প্রভাষক (ভূগোল), রংপুর ক্যাডেট কলেজ, রংপুর । Email: sahidulislamges@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied