আর্কাইভ  সোমবার ● ১৬ জুন ২০২৫ ● ২ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৬ জুন ২০২৫
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ৪০৬ জন নিহত, আহত ৬৫৪

ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ৪০৬ জন নিহত, আহত ৬৫৪

ইসরায়েলে আবারও মিসাইল ছুড়ল ইরান

ইসরায়েলে আবারও মিসাইল ছুড়ল ইরান

ইসরায়েলে হাইফায় সরাসরি আঘাত হানল মিসাইল

ইসরায়েলে হাইফায় সরাসরি আঘাত হানল মিসাইল

ইসরায়েলিদের ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গা’ থেকে সরে যেতে বলল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী

ইসরায়েলিদের ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গা’ থেকে সরে যেতে বলল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী

প্রসঙ্গ: মহান মে দিবস

বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, দুপুর ১২:৪১

Advertisement

নজরুল মৃধা

মহান মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় নির্যাতিত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কথা। বুর্জুয়া শ্রেণীর যাতাকলে পিষ্ট হয়ে শ্রমিকেরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল ১৮৮৬ সালে পহেলা মে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছিল। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয় কয়েকজন। আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেকেই বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। সে দিনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে সাড়া বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারীভাবে ৮ ঘন্টা কর্ম দিবস। ৮ ঘন্টার বেশি কেউ পরিশ্রম করলে তাকে অতিরিক্ত সময়ের জন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। তাই সারা বিশ্বে পালিত হয় পহেলা মে’ মহান মে দিবস’।

আজ থেকে একশ বত্রিশ বছর আগে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ সংগ্রাম রচিত হয়েছিল। সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, আমাদের দেশের শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বুর্জুয়া পুজিপতি ও এক শ্রেণীর শ্রমিক নেতাদের কাছে প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বুর্জুয়া ও শোষক শ্রেণীর হাত হতে মুক্তি পেতে আমাদের দেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায় এর নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছিল। সকল শ্রমিক সংগঠনগুলো একটি দলমত নির্বিশেষে একটি ঐক্য বদ্ধ শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল। বহুধা বিভক্ত মতবিরোধের মধ্যে একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল “বাংলাদেশ কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়ন” বিসিটি ইড নামের নতুন সংগঠনটি। শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশের প্রায় সবকটি ট্রেড ইউনিয়ন এর সংগে সংযুক্ত হবে এবং নতুন সংগঠনটির কোন রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে সে প্রচেষ্টাকে বিফল বলা চলে। শ্রমিক স্বার্থে সকল শ্রমিক সংগঠনগুলো এক হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে চামচাগিরি করা। ক্ষমতাসীন ও বিরোধি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাতে এক শ্রেণীর শ্রমিক নেতারা যেমন আত্মতৃপ্তি পায় তেমনি নিজদের আখের গোছাতে একেক জন সেদ্ধহস্ত। এখানে দেশের সাধারণ শ্রমিক, মহিলা শ্রমিক শিশু শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের বদলে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তার পরিবারিক অর্থ সংকট, স্বাস্থ্যহীনতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে কালাতিপাত করেন। যেমন শিশু শ্রম। বাংলাদেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য একটি সনদ ঘোষণা করেছে। মোট ১২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম উক্ত সনদে স্বাক্ষর করেন। ১৮ বছরের নিচে কাজ করা নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তব অবস্থা ভয়াবহ ও করুন। এদেশে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বাস, ট্রাক, টেম্পু, রিক্সা, কলকারখানা ও ক্ষেত খামারে শিশুদের অমানবিকভাবে খাটানো হচ্ছে। দারিদ্র্যতার কারণে তারা শ্রম দিয়ে তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে নির্মম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক শিশু শ্রমিক বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের কারণে অকালে প্রাণ হারান। এ ব্যাপারে সরকার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোন মাথা ব্যাথা নেই। 

এ দেশে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যাও নগন্য নয়। নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজ করছে। এদেশে গার্মেন্টস গুলোর প্রায় ৯০% শতাংশ মহিলা শ্রমিক। রানাপ্লাজা’র মত ভবন ধস কিংবা তাজরিনে অগ্নিকাণ্ডে শত শত শ্রমিত প্রাণ হারালেও বিচারের বাণি নিভৃতে কাঁদছে। এর মূল কারণ তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। এছাড়া পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা লাঞ্চিত হবার ঘটনা পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে দেখা যায়। এদেশের মহিলা শ্রমিকেরা নানা প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য কাজ করে যাচ্ছে। উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে স্বাস্থ্যহীনতা সহ নানা মুখি সমস্যায় ভুগছে। সর্বক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে না পারলে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবই বেশি। শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী আদায় এর ক্ষেত্রে শ্রমিক নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্য বদ্ধ ভাবে কাজ করে যাওয়া উচিত। ভেদাভেদের কারণে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যায় যে শ্রমিক নেতারা শ্রমিক স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থটিকে বড় চোখে দেখেন। রাজনৈতিক দলগুলো বৃহত্তর শ্রমিক সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এ কারণে অনেক সময় শ্রমিক নেতারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। প্রাথমিক অবস্থায় শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিক স্বার্থে কাজ করতে যেয়ে রাজনৈতিক মতভেদের কারণে নিজেদের মধ্যে হানাহানি রক্তক্ষয় হতে দেখা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে সংগঠনের নেতারা রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে সচেষ্ট হলেও ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সচেতন এবং এদেরকে মাঠে ময়দানে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারে ব্যবস্ত থাকতে দেখা যায়। এক সময় সম্মিলিত শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিল ২০টি শ্রমিক কর্মচারি সংস্থা। দেশের যে দল ক্ষমতায় আসে তখন বিরোধি শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে সরকার সমর্থিত সংগঠন সম্পর্ক হয় সতীনের মতন। এতে সাধাণ শ্রমিকদের স্বার্থ মারাত্মক ব্যাহত হয়।

রাজনৈতিক মতভেদের কারণে সাধারণ শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে শ্রমিকেরা ব্যাবহৃত হচ্ছে রাজনৈতিক কোন্দল। অনেক সময় এটাও দেখা যায় হরতালের সময় শ্রমিকেরা হরতালের পক্ষে বিপক্ষে দলবেঁধে রাজপথে নেমে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রাণ হানিও ঘটে। সুবিধাবাদি শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল মিটিং করছেন তা শ্রমিকদের স্বার্থের পরির্বতে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে। এ ছাড়াও নানাবিধ কারণে এদেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলো নিজেদের সুফল দেখতে পায়না। শ্রমিকদের নিজেদের শুধু মাত্র দাবি দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে নয় পণ্যের উৎপাদন ও বন্টনের স্বার্থ দেখা শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কর্তব্যের মধ্যে পরে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এদেশের শ্রমিক স্বার্থকে গলাটিপে হত্যা করছে শ্রমিক নেতা নামধারী এক শ্রেণীর অর্থলোলুপ ব্যক্তি। এদেশে যদি একটি মাত্র নিঃস্বার্থ ঐক্যবদ্ধ ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা সম্ভব হয় তবে হয়ত দেশে শ্রমিক স্বার্থ উৎপাদন স্বার্থসহ বিবিধ স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে শ্রমিক নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সত্যিকারের শ্রমিক কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন


Link copied