নিউজ ডেস্ক: জুলাই বিপ্লবের সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলো কেটে গেছে ঠিকই কিন্তু ক্ষতের দাগ আজও অমলিন। ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে যারা দেশের মানুষকে উপহাস করেছিল গণতন্ত্রকে বন্দী করেছিল তাদের অনেকেই এখন পলাতক। অনেকেরই পালানোর গন্তব্য কলকাতা। আর ঠিক সেখানেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো আইবি তৈরি করেছে এক ভয়াবহ ডেটাবেস। যেখানে বাংলাদেশের সাবেক শাসক চক্রের কালো কাহিনী খোদাই হয়ে গেছে অক্ষরে অক্ষরে। এই ডেটাবেজে এখন আছে ৭৩৪ জনের নাম। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমলা, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের কর্ণধার পর্যন্ত।
একসময় তারা ছিল ক্ষমতার মস্নদে। আজ তারা নির্বাসিত চরিত্র। ইতিহাসের পাদপ্রদীপে ধরা খাওয়া ভিলেন কলকাতার ব্যস্ত সাত মেডেল্টন স্ট্রিট সেখানে এখন গা ঢাকা দিয়ে আছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান যিনি ২০২৪ সালের কুখ্যাত দামি নির্বাচনের অন্যতম কারিগর মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগকে জেতানোর নকশা করেছিলেন তিনি এখন স্ত্রীকে নিয়ে নির্বিঘ্নে ভারতীয় নাম্বার ব্যবহার করলেও তার হাতে যে পাসপোর্ট আছে সেটি বাংলাদেশের আইনে আইনের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে থাকলেও ইতিহাসের কাছে তিনি রয়ে গেলেন ভোট চোর শাসনের প্রতীক। শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের অনুগত সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কলকাতার অন্য প্রান্তে। একসময় প্রধানমন্ত্রীর ছায়া সঙ্গী হিসেবে যিনি ছিলেন আজ তিনি পালিয়ে বেড়ানো আসামি। ডামে নির্বাচনের খসড়া থেকে শুরু করে এক নায়ক তন্ত্রের নকশা তৈরিতে তার ভূমিকা ছিল অসামান্য। সেই অপরাধী আজ তাকে গিলে খাচ্ছে। এরপর আসে আরেক ভিলেনের নাম সাবেক সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বিপ্লবের পর তিনি পাল্টা কু করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ভাঙ্গা সেতুর মতো গড়িয়ে পড়লেন ইতিহাসের আধারে। শেষ আশ্রয় মিলল কলকাতায়। আবার সল্ট লেকের বিলাসবহুল এলাকায় বসবাস করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ আর বিদেশে পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এই ব্যক্তি এখন নীরবে বিলাসিতা উপভোগ করছেন। যেন জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বানানো সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লেও তিনিনির্বিঘ্ন। আওয়ামী লীগের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা আরেক আমলা মোহাম্মদ রাশিদুল আলমও কলকাতার অতিথি। নির্বাচনী কারসাজি প্রহসনের ভোটে আওয়ামী লীগকে জেতানোর নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি। আজ তার পরিচয় কেবল একজন পলাতক অপরাধীর। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নাম সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। জুলাই গণহত্যার অন্যতম হোতা হিসেবে যার নাম ইতিহাসে লেখা হয়ে গেছে রক্তাক্ষরে। শত শত মানুষের রক্তের দায় তার কাঁধে।
এখন তিনি স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কলকাতায় অবস্থান করছেন। শোনা যায় ভারতের ডেপ স্টেটের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন। যেন পাপ থেকে মুক্তি নয় বরং নতুন চক্রান্তই তার জীবনের লক্ষ্য। তালিকায় আরো নাম জলজল করছে সিএমপির সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, ডিআইজি আনিসুর রহমান, মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রিফাত রহমান শামিম সহ বহু পুলিশ কর্মকর্তা। তারা একসময় ছিলেন ক্ষমতার পাহারাদার। আজ তারা ভগ্নদশার চরিত্র। রাজনীতির মঞ্চেও একই ছবি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দুজনেই এখন কলকাতায়। আওয়ামী লীগের পতনের পর যারা গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে তারাই এই পলাতকদের দলে। ৭৩৪ জনের এই ডেটাবেস শুধু তথ্য নয় বরং বাংলাদেশের অন্ধকার অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি।
আওয়ামী লীগ নামের দলটি জনগণকে বন্দী করে রেখেছিল ভয়ের রাজত্বে, লুটপাট আর দমন পীড়নের রাজনীতিতে। আর আজ তাদেরই অনুগত সেনাপতি ও সহযোগীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। কলকাতা শহর হয়তো তাদের আশ্রয় দিয়েছে কিন্তু জনগণের রোশ থেকে মুক্তি দেবে না। ইতিহাস সবসময়ই ভিলেনদের নাম লিপিবদ্ধ করে রাখে। কখনো অভিশাপ হিসেবে কখনো সতর্কবার্তা হিসেবে। জুলাই বিপ্লবের পরাজিত এই চরিত্রগুলো তাই বেঁচে থাকবেন পরবাসে। কিন্তু বাংলার মাটিতে তাদের পদচিহ্ন মুছে গেছে চিরতরে।