রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থ-সাউথ রোডের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে উদ্ধার অভিযান আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে। আজ রাত পৌনে ১১টায় উদ্ধারকাজ স্থগিতের কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা।
দিনমনি শর্মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ভবনের ভূ–গর্ভস্থ স্থানে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব নয়। তাই উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকালে সেনাবাহিনী আসবে, তারপর উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
আজ বিকেলে বিস্ফোরণের পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়। সেখানে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া শতাধিক মানুষকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সাততলা ভবনটির অবস্থা বেশ নড়বড়ে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা দিনমনি শর্মা। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচের অংশের অবস্থা খুব খারাপ। এটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন যদি ভূগর্ভস্থ স্থানে আমরা তৎপরতা চালাতে চাই তবে সেটা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভবনের কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভবনটি নাজুক অবস্থায় পড়ে গেছে। এ অবস্থায় উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব নয়।’
এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে মোট ১৮ জনের মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কুমিল্লার মেঘনা থানার বাসিন্দা কাতার প্রবাসী মো. সুমন(২১), তিনি রাজধানীর ১ নম্বর সুরি টোলা বংশাল এলাকার পরিবারসহ থাকতেন। বরিশাল জেলার কাজির হাট থানার চর সন্তোষপুর গ্রামের ইসহাক মৃধা(৩৫), তিনি ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী ২ নম্বর রোড বসবাস করতেন ও ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। পশ্চিমপাড়া যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মুনসুর হোসেন (৪০)। ৯৭ লুৎফর রহমান লেন, আলু বাজারের বাসিন্দা মো. ইসমাইল (৪২)। চাঁদপুর জেলার মতলব থানার পশ্চিম লালপুর গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন (২৩), তিনি বিবিএ ছাত্র ছিলেন। কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ চৈনকুটিয়া গ্রামের রাহাত (১৮)। ১১৫/৭/৫ ইসলাম বাগ, চক বাজার থানার মমিনুল ইসলাম। একই এলাকার নদী বেগম (৩৬)। জেলা মুন্সিগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর গ্রামের মাঈন উদ্দিন (৫০)। ৪৭ নং কে পি ঘোষ ষ্ট্রিট, বংশাল এলাকার নাজমুল হোসেন (২৫), তিনি আজাদ স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। মানিকগঞ্জ সদরের চর বেউথা গ্রামের বাসিন্দা ওবায়দুল হাসান বাবুল(৫৫)। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর। ১৮/১ আগামাসি লেন, বংশাল এলাকার আকুতি বেগম(৭০)। মীর হাজারীবাগ যাত্রাবাড়ী এলাকার মো. ইদ্রিস মির(৬০)। যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলের নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫) ও বংশাল থানার সিদ্দিক বাজার জাবেদ গলি এলাকার হৃদয় (২০), মো. সম্রাট (২২) ও মোহাম্মদ সিয়াম (২০)। হতাহতদের খোঁজে অনেকেই ভিড় করছেন হাসপাতালে। প্রিয়জনদের ছবি দেখিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছেন।